করোনার উৎস হয়তো কখনোই জানা যাবে না
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ, সঙ্গে টিকাদানের গতি বাড়িয়েও সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি মিলছে না অনেক দেশের। আর তাই এই মারাত্মক ছোঁয়াচে জীবাণুর উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। এ নিয়ে তদন্ত চললেও সবার সন্দেহের আঙুল যেন চীনের দিকেই।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, নানা বিতর্ক চললেও করোনাভাইরাসের মূল উৎস নির্ধারণে তারা সফল নাও হতে পারেন। আর এতে করে হয়তো ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে কখনোই জানা যাবে না। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) এই তথ্য জানায় তারা।
করোনাভাইরাস কী পশুর শরীর থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছিল নাকি গবেষণাগার থেকে দুর্ঘটনাক্রমে বাইরে সেটি ছড়িয়ে পড়ে সে বিষয়ে বিস্তারিত একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন একটি গোয়েন্দা সংস্থা। শনিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা অফিস অব দ্য ইউএস ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স (ওডিএনআই) এক রিপোর্টে জানিয়েছে, প্রাকৃতিক ভাবে করোনাভাইরাস উৎপত্তি এবং গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে উভয় বিষয়েই বিশ্বাসযোগ্য অনুমান রয়েছে। তবে এই দু’টির মধ্যে কোনটির সম্ভাবনা বেশি সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এছাড়া ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট মূল্যায়ন করা যায় কি না, সে বিষয়েও একমত নন বিশেষজ্ঞরা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোনো জৈব অস্ত্র হিসেবে করোনাভাইরাস সৃষ্টির বিষয়টিকেও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে মার্কিন গোয়েন্দাদের ওই রিপোর্টে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জৈব অস্ত্র হিসেবে ভাইরাস সৃষ্টির অভিযোগের প্রবক্তাদের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে সরাসরি প্রবেশাধিকার নেই। আর তাই এই ধরনের তত্ত্ব ছড়ানোর কারণে তাদেরকে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তবে এই রিপোর্টটি সামনে আসার পরপরই শুক্রবার এর সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘করোনাভাইরাসের উৎস খোঁজার জন্য বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভর না করে যুক্তরাষ্ট্র বরং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর আস্থা রাখছে। ওয়াশিংটনের এই কর্মকাণ্ড পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রহসন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ড ভাইরাসের উৎস নির্ধারণে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাকে ছোট করবে এবং একই লক্ষ্যে পরিচালিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকেও বাধাগ্রস্ত করবে।’
করোনাভাইরাস কীভাবে এলো তা নিয়ে এতদিন ধরে কম আলোচনা হয়নি। নানা ধরনের তত্ত্ব বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে। কেউ বলেছেন চীনের উহানে কাঁচা মাংসের বাজার থেকে, কেউ বলেছেন বাদুড় থেকে, আবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অনেকে অভিযোগ করেছেন, চীনের গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। চীন অবশ্য এই দাবি বারবার অস্বীকার করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করেছিল। তারা চীনে সফর করলেও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি ভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে হলো। তারা চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সম্ভবত বাদুড় থেকেই এই ভাইরাস এসেছে। তবে এনিয়ে আরও গবেষণা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রও বিশেষজ্ঞদের দল গঠন করেছিল একই লক্ষ্য নিয়ে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, উহান শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার ওই মার্কেটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি যখন মারা যান, তখনও এই রোগের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। চীনের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, চীন থেকে গোটা বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে কোভিড-১৯ কে ‘‘চীনা ভাইরাস’’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
যদিও, চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, করোনাভাইরাসের উত্স নির্দিষ্ট কোনো একটা জায়গা নয়। একাধিক উত্স থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য চীনের এই দাবির সঙ্গে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই একমত নয়।
টিএম