তালেবানে যোগদানের চেষ্টা, যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত বাংলাদেশি
আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থী নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবানে যোগদান এবং সহযোগিতার চেষ্টার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন এক নাগরিককে দোষী সাব্যস্ত করেছেন নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। শুক্রবার নিউ ইয়র্কের ফেডারেল আদালত দেলোয়ার মোহাম্মদ হোসাইন নামের ওই বাংলাদেশিকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
আদালতের একজন বিচারক তালেবানে যোগদান, তহবিল গঠন, পণ্য ও অন্যান্য সেবায় অবদান রাখার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদে সহায়তার চেষ্টার দায়ে ওই বাংলাদেশিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
৩৬ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি মার্কিন নাগরিক। নিউ ইয়র্ক থেকে পাকিস্তানের উদ্দেশে থাইল্যান্ডগামী বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে ২০১৯ সালে তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে, কোথায় যাচ্ছেন সে সম্পর্কে সন্দেহ দূর করার জন্য সরাসরি পাকিস্তানে না গিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন দেলোয়ার। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় গত বছর দেশটির একটি আদালত তাকে আটকে রাখার সময় বৃদ্ধি করে আদেশ জারি করেন।
নিউ ইয়র্কের ফেডারেল আদালতে এক সপ্তাহ ধরে জুরি বোর্ডের কাছে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য নেওয়া হয়। যুক্তিতর্ক এবং নথিপত্র বিশ্লেষণের দু’দিন পর শুক্রবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই নাগরিককে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।
দুই বছর আগে দেলোয়ারকে গ্রেফতারের সময় মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের নিউ ইয়র্ক অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উইলিয়াম সুইনি বলেছিলেন, উগ্র মতাদর্শের প্রলোভন অনেক উৎস থেকে আসে এবং তালেবানকে একটি পুরোনো ও প্রচলিত চরমপন্থী গোষ্ঠী হিসেবে মনে করা হয়; শুধুমাত্র এই কারণে তালেবানে যোগদানের চেষ্টাকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দেলোয়ার মোহাম্মদ হোসাইন তার সাথে পাকিস্তান ভ্রমণ এবং পরে সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানে যোগদানের জন্য এফবিআইয়ের গোপন অ্যাজেন্টকে নিয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন।
ফেডারেল আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে, এফবিআইয়ের অ্যাজেন্টকে দেলোয়ার বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আমার মৃত্যুর আগে কিছু কাফেরকে হত্যা করতে চাই।’ তিনি আফগানিস্তানে লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে ওয়াকিটকি এবং ট্র্যাকিং গিয়ারের মতো যোগাযোগের অন্যান্য সরঞ্জাম কিনেছিলেন। এছাড়া অস্ত্র কেনাকাটায় অর্থ বাঁচাতে সহায়তার জন্য অ্যাজেন্টকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে দেলোয়ার হোসাইন ছাড়াও আরও কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন।
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) বস্তুগত সমর্থন দেওয়ার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে গত মাসে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শহিদুল গাফ্ফার এবং নাবিলা খান দম্পতিকে কারাদণ্ডের সাজা দেন সেখানকার একটি আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শহিদুলকে ১৮ মাস এবং নাবিলা খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের বিচারকদের মতে, ২০১৫ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য এক ভাইকে সাহায্য করেন নাবিলা। এ জন্য বাংলাদেশে সোনার গহনা বিক্রি করেছিলেন তিনি। একই বছরে শহিদুলও তার এক ভাইকে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য অর্থ সহায়তা করেন। তবে শহিদুলের ওই ভাই ২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়ায় মারা যান।
গত এপ্রিলে সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইসলামিক স্টেটের আরেক সমর্থক আকায়েদ উল্লাহকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন যুক্তরাষ্ট্রের অপর একটি আদালত। ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের একটি সুড়ঙ্গে পাইপ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আহত হন আকায়েদ। পরে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গ্রেফতার করে।
তিনি আদালতকে বলেন, তিনি আইএসের সমর্থক নন, বরং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর ক্ষোভ থেকে তিনি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।
২০১৯ সালের জুনে টাইমস স্কয়ারে গোলাগুলির পরিকল্পনার দায়ে আশিকুল ইসলাম নামে আরেক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালে রাহাতুল আশিকিম খান নামে আরেক বাংলাদেশির ১০ বছরের কারাদণ্ড হয় যুক্তরাষ্ট্রে। জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান, আল-শাবাব এবং ইসলামিক স্টেটের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
এছাড়া ২০১২ সালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ পরিকল্পনার দায়ে পরের বছর দেশটির একটি আদালত আল-কায়েদার সমর্থক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে কয়েক বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন। এফবিআইয়ের আন্ডারকভার অ্যাজেন্ট তাকে ভুয়া বোমা সরবরাহ করায় হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
সূত্র: আইএএনএস।
এসএস