নির্বাচনের আগে কোণঠাসা মেরকেল শিবির
জার্মানিতে আগামী সপ্তাহে সাধারণ নির্বাচন। বিদায় নিচ্ছেন ইউরোপের কুইনখ্যাত জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তবে মেরকেলের বিকল্প হওয়ার স্বপ্ন থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে হচ্ছে তার পছন্দের আরমিন লাশেটকে। রোববারের টেলিভিশন বিতর্কে বাকি দুই প্রার্থী তাকে কোণঠাসা করে দিলেন। ঘুরে দাঁড়াতে সময় আছে এক সপ্তাহ।
নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে তৃতীয় ও শেষ ত্রিপাক্ষিক টিভি বিতর্কেও মানুষের মন জয় করতে পারলেন না মেরকেলের রক্ষণশীল শিবিরের প্রার্থী আরমিন লাশেট। জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, তিনটি বিতর্কেই সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের প্রার্থী ওলাশ শলৎস জয়ী হয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনাই এখন প্রবল হয়ে উঠছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, গ্রিন পার্টির আনালেনা বেয়ারবক চ্যান্সেলর হওয়ার স্বপ্ন কার্যত ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় বিতর্কে খোলাখুলি এসপিডি দলের সঙ্গে সরকার গড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন লাশেট। বৃহস্পতিবার সব প্রধান দলের শীর্ষ প্রার্থীদের টিভি বিতর্কের পর অনিশ্চিত ভোটাররা মনস্থির করার হয়তো আরেকটি সুযোগ পাবেন।
তবে ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, বর্তমানে যে অবস্থা ২৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের দিনেও ভোটাররা একই মনোভাব দেখালে এসপিডির নেতৃত্বেই জার্মানির নতুন সরকার গঠিত হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু গ্রিন পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
সমীক্ষায় ৪২ শতাংশ মানুষ চ্যান্সেলর হিসেবে শলৎসকে সমর্থন দিলেও তার দল এসপিডির পক্ষে মাত্র ২৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে বামপন্থি দল ডি লিংকে বা উদারপন্থি এফডিপিকে তৃতীয় শরিক করতে হবে। ফলে জোট সরকার গঠনের আলোচনা দীর্ঘ হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নির্বাচনের পর সরকার গড়তে রেকর্ড ছয় মাস সময় লেগেছিল।
রোববারের টিভি বিতর্কে শলৎস ও বেয়ারবক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যে দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার শীর্ষে থাকার পর সিডিইউ ও সিএসইউ দলের রক্ষণশীল শিবিরের সংসদে বিরোধী পক্ষে বসার সময় এসে গেছে। সামাজিক গণতন্ত্রী দলের কর্মসূচির সঙ্গে নিজের দলের লক্ষ্যের যথেষ্ট মিল থাকায় বেয়ারবক লাল-সবুজ জোটের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন।
জার্মানিতে ন্যূনতম মজুরির হার বাড়ানো, বেকারভাতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার মতো বিষয় নিয়েই লাশেট ও বাকি দুই প্রার্থীর দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে পড়ে। শলৎস মনে করিয়ে দেন, ন্যূনতম মজুরির হার বাড়ালে দেশের প্রায় এক কোটি মানুষের উপকার হবে।
তার মতে, একাধিক কাজ করেও তারা হিমশিম খাচ্ছেন। ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী হিসেবেও শলৎস সেই চেষ্টা চালিয়েছেন বলে দাবি করেন। অন্যদিকে লাশেট বিষয়টি শ্রমিক সংগঠন ও শিল্পজগতের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে।
জাতীয় স্তরে সিডিইউ দলের পাশাপাশি বাভারিয়ার সিএসইউ দলও জনমত সমীক্ষায় সমর্থন হারানোর ফলে লাশেটের ইউনিয়ন শিবিরের সংকট আরও জোরালো হচ্ছে। সিএসইউ নেতা ও বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও তার দল দ্বিতীয় ভোটে পাঁচ শতাংশের সীমা অতিক্রম করা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।
ডয়েচে ভেলে বলছে, এমন অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ইউনিয়ন শিবিরে বাড়তি সংশয় দেখা যাচ্ছে। তবে প্রথম ভোটে সরাসরি যথেষ্ট প্রার্থীর জয়ের দৌলতে সিএসইউ দল সংসদে যথেষ্টসংখ্যক আসন পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এএস