তিনদিনের মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে ফিরলেন চার সাধারণ পর্যটক
টানা তিনদিন মহাকাশ পরিভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন চার জন পর্যটক। স্থানীয় সময় শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে নিরাপদে অবতরণ করেন তারা। তিন দিনের এই ভ্রমণ মিশনে এবারই প্রথম কোনো সাধারণ পর্যটক হিসেবে মহাকাশ ও পৃথিবীর কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে নিরাপদে ফিরে এলেন তারা।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে চার বেসামরিক নাগরিককে নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশে রওনা হয় স্পেসএক্সের ফ্যালকন নাইন রকেটটি। আর এ মহাকাশযাত্রার নাম দেওয়া হয় ইন্সপিরেশন ফোর।
মার্কিন ধনকুবের এলন মাস্কের মালিকানাধীন রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ড্রাগনের ফ্যালকন নাইন রকেটটিতে করে মহাকাশে যাওয়া এই চার পর্যটকের কেউই পেশাগতভাবে নভোচারী নয়। তাদের সবাই সাধারণ মানুষ, শখের বশেই মহাকাশে ঘুরতে যাওয়া। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর কক্ষপথে কেবল বেসামরিক নাগরিকদের বহনকারী নভোযান পাঠাল স্পেসএক্স।
বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার কিছু সময় পর চার জন পর্যটকবাহী স্পেসএক্স ইন্সপিরেশন ফোর রকেটটি নিরাপদে অবতরণ করে। চারটি বড় প্যারাশুটের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ফ্লোরিডা উপকূলবর্তী আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করে। অবতরণের এই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।
মহাকাশে ভ্রমণের সময় চার পর্যটক ঘণ্টায় ১৭ হাজার পাঁচশ মাইল বেগে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করছেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার তারা পৃথিবীর কক্ষপথ থেকেই জনপ্রিয় হলিউড তারকা টম ক্রুজের সঙ্গে সরাসরি ভিডিওকলে যুক্ত হয়ে কথা বলেন। সেসময় চার জন পর্যটকই নিজেদের মহাকাশে ভ্রমণের অনুভূতিসহ আপডেট তথ্য জানিয়েছিলেন। বিপরীতে সেসময় টম ক্রুজ মহাকাশে চলচ্চিত্র নির্মাণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মহাকাশ ভ্রমণ করে আসা এই অপেশাদার পর্যটক কারা?
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অপেশাদার ৪ জন যাত্রী মহাকাশ ও পৃথবীর কক্ষপথ ভ্রমণ করে এলেও তারা কিন্তু ‘সাধারণ মানুষ’ নন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই ভ্রমণের স্পন্সর করেছেন মার্কিন ধনকুবের জ্যারেড আইজ্যাকম্যান। তিনি পেমেন্ট প্রসেসর শিফটফোর পেমেন্টস-এর প্রতিষ্ঠাতা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পাইলট ট্রেনিংও রয়েছে। অর্থাৎ তিনি আকাশযান উড্ডয়ন করতে সক্ষম।
অন্যদিকে বাকি ৩ জনকে জ্যারেডই নির্বাচন করেছেন। এর জন্য একটি ছোট প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন তিনি। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হেইলি আর্সেনউক্স নামের এক ২৯ বছর বয়সী পেডিয়াট্রিক ক্যান্সার সার্ভাইভারকে বেছে নিয়েছিলেন জ্যারেড।
হেইলি এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তার বাম পায়ের অস্থির বদলে একটি রড রয়েছে। বোন ক্যানসারের চিকিৎসার সময়ে এটি বসানো হয়। এই প্রথম এমন কোনো ব্যক্তি মহাকাশে ভ্রমণ করে এলেন।
অপর জন হলেন ক্রিস সেমব্রোস্কি। তিনি মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি সিয়াটলের লকহিড মার্টিনে অ্যারোস্পেস ডেটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করেন।
সর্বশেষ সদস্য হলেন সিয়ান প্রক্টর। ফিনিক্সের ৫১ বছর বয়সী ভূতত্ত্ববিদ তিনি। ২০০৯ সালে নাসার মহাকাশচারী হওয়ার জন্য নির্বাচিত হলেও শেষ মুহূর্তে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার তিনি মহাকাশ ঘুরে এলেন। নাসার নভোচারী হিসেবে নয়, সাধারণ একজন পর্যটক হিসেবে।
টিএম