আফগানিস্তানে গঠিত হচ্ছে ‘পাপ-পুণ্য’ মন্ত্রণালয়!
আফগানিস্তানের নতুন সরকারে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় নেই। তালেবানের মন্ত্রিসভায় কোনো নারী সদস্যও নেই। এবার জানা গেল এত দিন ধরে থাকা দেশটির নারী মন্ত্রণালয় একরকম বিলুপ্ত করে দিচ্ছে তালেবান। মন্ত্রণালয়টির যে ভবন রয়েছে শুক্রবার ওই ভবনের ‘নারী মন্ত্রণালয়’ নাম ফলক খুলে সেখানে নতুন একটি মন্ত্রণালয়ের নাম ফলক লাগানো হয়েছে। নতুন এ মন্ত্রণালয়ের নাম বেশ বড়, তবে সংক্ষেপে এর নাম ‘পাপ-পুণ্য’ মন্ত্রণালয়!
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। তারা বলছে, শুক্রবার দারি পার্সিয়ান এবং আরবি ভাষার মিশ্রণে ‘প্রার্থনা ও পথপ্রদর্শন এবং পুণ্য কাজে উৎসাহ ও অধার্মিকতাকে নিরুৎসাহিতকরণ মন্ত্রণালয়’ নামে সেখানে নতুন নামফলক বসানো হয়েছে।
রয়টার্সের হাতে আসা ভবনটির বাইরের একটি ভিডিও ফুটেজে নারী মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের (নারী) বলতে শোনা যায়, তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রতিবার তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় ভবনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ওই নারী কর্মীদের একজন।
মন্ত্রণালয়টির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া অপর একজন নারী বলেছেন, ‘আমার পরিবারে আমি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার আয়ে সংসার চলে। কিন্তু এখন যেখানে মন্ত্রণালয়ই নেই, সেখানে আফগান নারীদের কী করা উচিত?‘
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তালেবানের মুখপাত্রের পক্ষ থেকে থেকে কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিসেনাদের চলে যাওয়ার মধ্যে গত মাসে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের দখলে নেয় তালেবান। কট্টর ইসলামপন্থী এই গোষ্ঠী ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দশ বা বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আফগানিস্তানের নারীদের জন্য তখন শিক্ষাসহ যে কোনো কাজেই ছিল নিষেধাজ্ঞা।
ওই সময় তালেবানের ‘পূণ্য কাজে উৎসাহ ও অধার্মিকতাকে নিরুৎসাহিতকরণ মন্ত্রণালয়’ গোষ্ঠীটির ‘মোরাল পুলিশিং’ তৎপরতার জন্য কুখ্যাত ছিল। এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তৎকালীন তালেবান শাসকরা নিজেদের মতো ব্যাখ্যাকৃত কঠোর শরিয়া আইন মানতে বাধ্য করত। এর মধ্যে ছিল কঠোর পোশাকবিধি, প্রকাশ্যে সাজা ও বেত্রাঘাতের মতো বিষয়।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ৭ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন একটি মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছে তালেবান। যেই মন্ত্রিসভায় দেশটির কোনো নারীর ঠাঁই হয়নি। এছাড়া ‘পুণ্য কাজে উৎসাহ ও অধার্মিকতাকে নিরুৎসাহিতকরণ মন্ত্রণালয়ের’ দায়িত্বও একজনকে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য তালেবান এ নিয়ে এখনো কিছুই নিশ্চিত করে জানায়নি।
এএস/জেএস