করোনায় টান বেতনে, আয় বাড়াতে রাস্তায় মাছ ভাজা বিক্রি করছেন শিক্ষক
করোনাভাইরাসের কারণে বেতন কমেছে বেসরকারি বিএড কলেজের এক শিক্ষকের। আর্থিক অনটনের প্রভাব পড়েছিল দাম্পত্য জীবনেও। স্বামী-স্ত্রীর সেই মনোমালিন্য চলে গিয়েছিল বিচ্ছেদের দোরগোড়ায়।
এতো সমস্যার মাঝেও হাল ছাড়েননি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমানের গুসকরা শহরের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক সৌরভ বারুই। ভ্যান নিয়ে শুরু করলেন ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট। যা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে এলাকায়।
৩৬ বছরের সৌরভ কুমার বাড়ুইয়ের তৈরি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের বিশেষ পদের স্বাদ পাননি এমন লোক গুসকরা শহরে নেই বললেই চলে। এখন গুসকরা শহরের নোওয়াপুকুর পাড় এলাকায় বিকেল হলেই বাতাসে ভেসে আসে ফিশ ফ্রাইয়ের সুবাস। তার টানে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন।
ভেটকি, পাবদা, চিংড়ি, ভোলা, সার্টিন, ইলিশ থেকে শুরু করে থাকছে সামুদ্রিক কাঁকড়ার ফ্রাইও। পছন্দমতো অর্ডার করলেই কাঁচা শালপাতায় মুড়ে লেবুর রস বা চাটনি মাখিয়ে এগিয়ে দিচ্ছেন সৌরভ। এই ধরনের মাছের পদ সচরাচর সমুদ্র সৈকতগুলোতে পাওয়া যায়। তবে সমুদ্রসৈকতে কাঁচা শালপাতার প্লেটে খাওয়ার ইচ্ছা হলেও পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু জঙ্গলমহল এলাকা লাগোয়া গুসকরা শহরে টাটকা শালপাতাতেই খাবার পরিবেশন করতে পছন্দ করেন শিক্ষক সৌরভ।
নিশ্চয়ই ভাবছেন কী নাম বিশেষ এই রেস্তরাঁর? বেসরকারি কলেজের শিক্ষক সৌরভ তার এই ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্টের নামও রেখেছেন, ‘ঢেঁকুর’। গুসকরা শহরের শান্তিপুর এলাকায় বাড়ি তার। বাবা মা আগেই মারা গেছেন। প্রায় ৯ বছর ধরে মুর্শিদাবাদে একটি বেসরকারি কলেজে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষকতা করছেন। পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে তার। যদিও সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী এখন বাপের বাড়িতে।
সৌরভ কুমার বারুইয়ের কথায়, ‘গতবছর থেকে করোনা মহামারির কারণে রুজি-রোজগারে টান পড়ায় সংসারে অশান্তি শুরু হয়। একবার মনে হয়েছিল বিচ্ছেদ হয়েই যাবে। তবে ব্যবসা শুরুর পর যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে চাকরি ছেড়েও দিতে পারি।’
করোনা মহামারি এখনও চলছে। আর তাই কলেজ বন্ধ থাকায় সপ্তাহে একদিন করে মুর্শিদাবাদ যেতে হচ্ছে সৌরভকে। বাকি দিনগুলো কেবল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবসা চালান। প্রতিদিন সকালে বর্ধমান শহর থেকে মাছ কিনে আনেন। তারপর মশলা বাড়িতেই তৈরি করে গরম গরম ভেজে বিক্রি করেন। মাস তিনেক ধরে এই নতুন ব্যবসা তিনি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই ব্যবসায় তিনি সফল হয়েছেন বলেও জানান সৌরভ।
টিএম