মেয়েদের পড়াতে ‘সচ্চরিত্র’ বৃদ্ধ খুঁজছে তালেবান
কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরই তালেবান নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে বসে পড়াশোনা করতে পারবে না ছেলে-মেয়েরা। এবার জানানো হলো, স্কুল-কলেজে মেয়েদের পড়াবেন শুধু নারী শিক্ষক। নারী শিক্ষক না পাওয়া গেলে তখন ‘সচ্চরিত্র’ বয়স্ক শিক্ষকদের নিয়োগ করা যেতে পারে। অন্যদিকে ছেলেদের পড়াবেন শুধু পুরুষ শিক্ষক।
কিছু দিন আগেই কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠকের পর আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় কোনো বাধা থাকবে না। তারাও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে পারবেন। তবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলেও শরিয়া আইন (ইসলামে বর্ণিত বিধিবিধান) মেনে তাদের পড়াশোনা করতে হবে।
এই বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করে তালেবান নেতৃত্ব জানিয়ে দেয়, শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে বসতে পারবেন না ছাত্র এবং ছাত্রীরা। হয় তাদের পৃথকভাবে ক্লাস নিতে হবে নয়তো পর্দা টাঙিয়ে শ্রেণিকক্ষকে দুভাগে ভাগ করতে হবে যেন ছেলে-মেয়ে পৃথকভাবে বসতে পারে। পর্দা টাঙিয়ে ছেলে-মেয়েদের আলাদা বসার একটি ছবি ইতোমধ্যে নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তবে আফগানিস্তানের নারীদের শিক্ষা নিয়ে তালেবানের বিধিনিষেধ এখানেই শেষ নয়। ওই নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, নিকাব পরে মুখ ঢেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে মেয়েদের। এছাড়া কলেজ ছুটির সময় পাঁচ মিনিট আগে শ্রেণিকক্ষ ছাড়তে বলা হয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের, যাতে কলেজ চত্বরেও ছেলেদের সঙ্গে তারা মেলামেশা করতে না পারে।
আফগানিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থায় এই সব নিয়মবিধিই চালু ছিল তালেবান শাসনের প্রথম অর্থাৎ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। আফগানিস্তানে দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধের অবসানে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবানের দ্বিতীয় পর্বের শাসনামলেও ওই পুরনো ব্যবস্থাই ফিরে আসতে চলেছে আফগানিস্তানে। এমন আশঙ্কা করছেন দেশটির নারী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তালেবানের নিষ্ঠুর শাসনের ভয় তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানজুড়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের শাসনামলে নারীদের শিক্ষা ও চাকরির অধিকার ছিল না। তারা পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না। তালেবান ক্ষমতায় এসেই জাতীয় ক্রিকেট দলসহ আফগানিস্তানে নারীদের সব খেলায় নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে।
তালেবানের প্রধান ও সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাও বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীকে এটা নিশ্চিত করতে চাই যে ইসলামিক আইন ও শরিয়া আইন বাস্তবায়নে সরকার কঠোর পরিশ্রম করে যাবে। ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের সব কর্মকাণ্ডই পরিচালিত হবে শরিয়া আইন অনুসারে।’ তালেবান প্রধানের কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর এই শঙ্কা আরও বেড়েছে।
এএস