বিদায়ের আগে ইউরোপীয় পুরস্কার পাচ্ছেন মেরকেল
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। পরবর্তী সরকার গঠিত হওয়া পর্যন্ত মেরকেল দায়িত্বপালন করবেন। তবে বিদায়ের আগে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্পেনের একটি পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।
অবশ্য এখন থেকেই মেরকেলের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়ন শুরু হয়ে গেছে। তার আমলেই জার্মানিতে সামরিক বাহিনীতে তরুণদের বাধ্যতামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। পরমাণু ও জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি পুরোপুরি ত্যাগ করে ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পথে যাত্রাও শুরু হয়েছে।
এছাড়া সমলিঙ্গের বিবাহ ও সদ্যোজাত সন্তানের দেখাশোনার লক্ষ্যে পিতাদের জন্য ভাতা ও ছুটির মতো বেশ কিছু প্রগতিশীল সিদ্ধান্তও সমাজের ওপর প্রভাব ফেলছে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক আঙিনায় অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের দৃঢ় অবস্থান গোটা বিশ্বে সমীহ আদায় করেছে। ইউরোপের সংকট সামলানো ও স্বার্থ রক্ষায় তার উদ্যোগ বার বার নজর কেড়েছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের সময়ে তিনি জার্মানির মানুষের সঞ্চয় নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করে যথেষ্ট আস্থা অর্জন করেছিলেন। ঋণ সংকট থেকে ইউরোপীয় অভিন্ন মুদ্রা ইউরোকে রক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার মেরকেলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাকে কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের হাল ধরতে হয়েছে। কোনো নির্বাচনী কর্মসূচিতে সেসব সংকট সামলানোর উল্লেখ ছিল না। রাতারাতি সেগুলো এসেছে। আপনাকে ভালোভাবে সেসব সামলাতে হয়েছে। আপনি ভালোভাবেই আমাদের দেশকে রক্ষা করেছেন।’
বিদায়ের আগেই মেরকেল ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার প্রতি দীর্ঘ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্পেনের কার্লোস দ্য ফাইভ পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কারের প্রশস্তিপত্রে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইউরোপের কৌশলগত অবস্থানের প্রতি তার সমর্থনের কথাও উল্লেখ থাকছে।
স্পেনের পশ্চিমে কাসেরেস প্রদেশের ইউস্টে ফাউন্ডেশনের ইউরোপীয় ও ইবেরো-অ্যামেরিকান সোসাইটি ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে থাকে।
সাহসী পদক্ষেপ নিতে গিয়ে মেরকেলের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিককেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ২০১৫ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের জের ধরে শরণার্থীদের ঢল নামার সময়ে মেরকেল তাদের জার্মানিতে স্বাগত জানিয়েছেন।
‘আমরা পারবো’ স্লোগান মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রশংসা কুড়ালেও জার্মানি তথা ইউরোপে এতো সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ দেখা গেছে। এবার আফগানিস্তান সংকটের সময়েও সেই মনোভাব দেখা যাচ্ছে। আফগান শরণার্থীদের তুরস্কেই আটকে রাখতে ইউরোপের তৎপরতা বাড়ছে।
ম্যার্কেল নিজে অসমাপ্ত কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। তার আমলে জার্মানি ডিজিটাল প্রযুক্তি সব স্তরে ছড়িয়ে দিতে যথেষ্ট সাফল্য পায়নি। করোনা সংকটের সময়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতর ফ্যাক্স যন্ত্রের ওপর নির্ভর করায় সেই দৈন্য আরও স্পষ্ট হয়ে যায়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
টিএম