করোনায় ছারখার ইন্দোনেশিয়ায় খুলছে স্কুল
করোনার অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রকোপে বিপর্যস্ত ইন্দোনেশিয়ায় দৈনিক সংক্রমণ কমতে থাকায় স্কুলগুলো খুলে দিচ্ছে দেশটি । সোমবার এশিয়ার বৃহত্তম এই দ্বীপরাষ্ট্রের রাজধানী জাকার্তার ১০ হাজার স্কুলের মধ্যে ৬০০ টি খোলা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে জাকার্তার গভর্নর আনিস বাসওয়েদান বলেন, ‘জাকার্তায় করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করেছে। এ কারণে স্কুলশিক্ষা কার্যক্রম আবার স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
আনিস জানান, জাকার্তার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ৯১ শতাংশ ও স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৮৫ শতাংশ করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন। এছাড়া রাজধানীর মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই করোনা টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস করার জন্য স্কুলে আসতে ইচ্ছুক, তাদের সবাইকে অবশ্যই টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন স্কুলগুলো খোলা থাকবে, বাকি ছয়দিন শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস করবে।’
স্কুল খোলার সংবাদে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ইন্দোনেশিয়ার স্কুল শিক্ষার্থী, বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা। জাফিরা সামারা উফারিয়া আজ্জা নামের ৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী রয়টার্সকে বলেছে, ‘এটা খুবই দারুণ একটা ব্যাপার! আমি আবার আমার বন্ধু ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে পারব।’
তবে তার মা এনডাং সুগিয়ার্তি মহামারি পরিস্থিতির কারণে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই। তবে তারপরও তার শিক্ষাজীবনের কথা ভেবে হয়তো আমরা সেই ঝুঁকিটা নেব।’
স্কুল কার্যক্রম স্বাভাবিক করার বিষয়টি ইন্দোনেশিয়ার সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে- এমন ইঙ্গিত অবশ্য গত সপ্তাহে পাওয়া যায়। দেশটির শিক্ষামন্ত্রী নাদিম মাকারিম বলেছিলেন, ‘মহামারির কারণে ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক শিশু ইতোমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতার বাইরে চলে গেছে এবং তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।’
‘যদি দ্রুত কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’
তবে ইন্দোনেশিয়ার স্কুল শিক্ষকদের সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব ইন্দোনেশিয়ান টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম মুখপাত্র হেরু পুরনোমো অবশ্য এ বিষয়ে সরকারকে ‘রয়ে সয়ে’ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে, কিন্তু যেহেতু এটি ডেল্টা ধরনের কারণে হচ্ছে, তাই যে কোনও সময় সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে।’
‘আপাতত ৬১০ টি স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; এটি ইতিবাচক এবং সরকারের উদ্দেশে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, বাকি স্কুলগুলো খোলার ক্ষেত্রে যেন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেহেতু এখানে আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত, তাই তাড়াহুড়ো করা হলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’
করোনার অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রকোপে এশিয়ার যে দেশসমূহ সবচেয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে, সেসবের মধ্যে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩১ জন এবং মারা গেছেন মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৯২৩ জন।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ