ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ অক্টোবরে, শিশুদের নিয়ে শঙ্কা
আগামী অক্টোবর মাসেই ভারতে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে। একইসঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি এবার শিশুদের মধ্যে আরও বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার এক রিপোর্টে এমন তথ্যই জানিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (এনআইডিএম)।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ আঘাত করেছে। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশটিতে ‘আর ভ্যালু’ ১-এর ওপর উঠে গেছে। এক জন সংক্রমিত রোগী থেকে কত জন আক্রান্ত হচ্ছেন, তা বোঝানো হয় এই ‘আর ভ্যালু’ দিয়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে যাতে আরও সতর্ক হয়ে আসন্ন ঢেউয়ের মোকাবিলা করা হয়, রিপোর্টে সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ওই রিপোর্ট বলা হয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে বিপুল সংখ্যক শিশু সংক্রমিত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য যত সংখ্যক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো প্রয়োজন, তা দেশে নেই। এই বিষয়টির দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়ার অর্থাৎ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি ভেন্টিলেটর, অ্যাম্বুলেন্সের মতো চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের ওই কমিটি।
এদিকে এই রিপোর্ট সামনে আসতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কারণ, অক্টোবর থেকেই পশ্চিমবঙ্গসহ পুরো ভারতে পুজার মৌসুম শুরু হচ্ছে। তার মধ্যেই কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়া এবং তা শিখর ছোঁয়ায় পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সম্প্রতি আইআইটি-র একটি গবেষণাও জানিয়েছিল, আগামী অক্টোবর মাসেই ভারতে চরম আকার নিতে পারে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তৈরি বিশেষজ্ঞদের কমিটিও সেই একই ইঙ্গিত দিলো।
কিছুদিন আগেই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকের সরকার জানিয়েছিল, তাদের রাজ্যে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। মাত্র পাঁচদিনে কেবল বেঙ্গালুরুতে কমপক্ষে ২৪২ জন শিশু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে ওই কথা জানিয়েছিল কর্ণাটক সরকার। ওই সংখ্যা প্রকাশ্যে এনে সতর্ক করা হয়েছিল রাজ্যবাসীকে। সতর্ক না হলে ওই সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
তবে আপাতত ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমে চারশর নিচে নেমে এসেছে। একইসঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে ভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যাও। এছাড়া শনাক্ত রোগী কমার পাশাপাশি ভারতে বেড়েছে সুস্থতার হার। ফলে দেশটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় সোয়া ৩ লাখে।
সোমবার (২৩ আগস্ট) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৫ হাজার ৭২ জন মানুষ। সর্বশেষ এই সংখ্যাসহ মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৬ জনে।
অন্যদিকে রোববার ভারতে প্রাণহানির সংখ্যা চারশ ছাড়ালেও সোমবার তা ফের কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৩৮৯ জন। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৬ জন।
এদিকে ভারতে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা নেমে এসেছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯২৪ জনে। গত ১৫৫ দিনের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। দেশটির মোট শনাক্ত রোগীর ১ দশমিক ০৩ শতাংশ বর্তমানে সক্রিয় রোগী। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে এই হার সর্বনিম্ন।
টিএম