যেভাবে কাবুল ছাড়েন ভারতের সোহিনী
সোহিনী সরকার, একজন ভারতীয় নাগরিক। একটি মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে আফগানিস্তানে কর্মরত ছিলেন তিনি। দেশটিতে চলমান সংঘাতের প্রথম থেকেই সেখানে তিনি কাজ করছেন। রোববার তালেবানদের আফগানিস্তান দখলের পর এয়ার ইন্ডিয়ার শেষ বিমানে দিল্লিতে ফেরেন সোহানী।
গণমাধ্যমে তিনি বলেন, আজ (১৫ অগাস্ট) যে দিল্লি ফিরব, তা কয়েকদিন আগে থেকেই জানা ছিল। টিকিটও বুক করা ছিল। তবে ওইদিনই যে তালেবানরা শহরটা দখল করে নেবে তা আঁচ করতে পারিনি। রোববার সকালেই বজ্রপাতের মতো খবর এলো তালেবান পিডি-ফাইভে ঢুকে পড়েছে।
ওইদিনে চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ওই এলাকা আমার অফিসের বেশ কাছেই। পুরো কাবুল শহরটা এরকম বারো-তেরোটা পুলিশ ডিসট্রিক্টয়ে (পিডি) ভাগ করা। এর মধ্যে পাঁচ নম্বরটা আমাদের সবচেয়ে কাছে- আর তালেবান রাজধানীতে প্রবেশ করে ওই পথেই।
তিনি আরও বলেন, বিকেলে ফেরার ফ্লাইট থাকলেও জরুরি কিছু কাজের জন্য রোববার সকালেও অফিসে গিয়েছিলাম। স্থানীয় কর্মীরাও কাজে এসেছিলেন। পরে তালেবানদের ঢুকে পড়ার খবরে সবাইকে বাড়ি ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমাদের কয়েকজন কর্মী টাকা তুলতে ব্যাংকেও গিয়েছিলেন। তারা এসে খবর দেয়, সব ব্যাংকেই না কি টাকা ফুরিয়ে গেছে। এটিএম বা ব্রাঞ্চ থেকে কোনো টাকা তোলাই যাচ্ছে না। তখন থেকেই সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ভয়ে সবার মুখ শুকিয়ে আসে।
সোহিনী বলন, এর মধ্যেই মার্কিন দূতাবাস থেকে নির্দেশ আসে, স্টেশন ছাড়ার আগে সব সেন্সিটিভ ডকুমেন্টস, কর্মীদের নাম-পরিচয় সরিয়ে ফেলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। তাও সেটা নীরবে। একটা ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করছিল সারাক্ষণ। আমি প্রায় ২০০ জন স্থানীয় আফগানের সঙ্গে এতদিন কাজ করছি, তাদের এই বিপদের মধ্যে রেখেই আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। তারা চাইলেও সেখান থেকে যেতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, কাবুলের অনেকেই ভারতে ফিরতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তখন ভারতও ভিসা দেওয়ার বন্ধ করে দেয়। এসবের মধ্যেই অবশেষে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিলাম। কাবুল শহরের সব গাড়ি যেন গিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকতে চাইছে।
এয়ারপোর্টে গিয়ে প্লেন ছাড়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে সোহিনীকে। বেলা পৌনে তিনটায় ছিল তার ফ্লাইট। কিন্তু সেটা ছাড়ে প্রায় চার ঘণ্টা পর।
তিনি বলেন, আমরা যখন কাবুল এয়ারপোর্ট ছাড়ি, তখনও বিমানবন্দরের পরিস্থিতি একেবারে হাতের বাইরে চলে যায়নি।
এমএইচএস