‘হেরাতের সিংহ’ খ্যাত মিলিশিয়া কমান্ডারকে বন্দি করেছে তালেবান
আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের বেশিরভাগ এলাকার দখলে নিয়েছে তালেবান। একই সঙ্গে হেরাতে তালেবানবিরোধী প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেওয়া ‘হেরাতের সিংহ’ খ্যাত স্থানীয় মিলিশিয়া কমান্ডার ইসমাইল খানকেও বন্দি করেছে আফগানিস্তানের সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত কয়েকদিন তালেবানের বিদ্রোহীদের হাতে আফগানিস্তানের ১৭টি প্রদেশের পতন হয়েছে। তার মধ্যে হেরাত সর্বশেষ শুক্রবার তালেবানের দখলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর একের পর এক প্রদেশের পতন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি নেতৃত্বাধীন সরকারকে মর্মান্তিক ধাক্কা দিয়েছে।
দেশটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আফগান সরকার হেরাতের কেন্দ্র থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরের হেরাত বিমানবন্দর, সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের সদরদপ্তর, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শেষ কেন্দ্রগুলো থেকে সরকারি সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হয়েছে। তবে অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, স্থানীয় সময় বিকেল ১টার দিকেও আফগান সৈন্যদের বিমানবন্দরে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য গুলাম হাবিব হাশিমি বলেছেন, তালেবান সম্মতি জানিয়ে বলেছে যে, তারা আত্মসমর্পণকারী সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য কোনও হুমকি বা ক্ষতির কারণ হবে না।
যুদ্ধ থামার সঙ্গে সঙ্গে হেরাতের সড়ক-মহাসড়কে নীরবতা নেমে আসে। প্রায় ৬ লাখ মানুষের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হেরাতের সঙ্গে ইরানের সীমান্ত রয়েছে; শতাব্দি ধরে পারস্য সংস্কৃতির ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই শহর। হেরাতকে ভুতুড়ে নগরী হিসেবে বর্ণনা করে হাশিমি বলেছেন, পরিবারগুলো চলে গেছে অথবা নিজেদের বাড়িঘরে লুকিয়ে আছে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর নিয়মিত সেনা সদস্যদের সাথে কাজ করা জনপ্রিয় মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর ক্রমবর্ধমান তীব্র লড়াই দেখেছে হেরাত। দেশটির প্রখ্যাত মিলিশিয়া কমান্ডার ইসমাইল খান; তার বয়স বর্তমানে ৭০ এর কোটায়। প্রদেশের গভর্নর এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একটি চুক্তির ভিত্তিতে মিলিশিয়া এই কমান্ডারকে তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন গুলাম হাবিব হাশিমি। তবে চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি তিনি।
মিলিশিয়া কমান্ডার ইসমাইল খানকে বন্দি করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ। রয়টার্স বলেছে, হেরাতে সরকারি বাহিনী এবং মিলিশিয়াদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে তালেবানের হাতে ইসমাইল খানের বন্দির এই ঘটনা।
তালেবানের বিদ্রোহীদের হাতে হেরাতের প্রখ্যাত এই কমান্ডারকে তুলে দেওয়ার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এসব ছবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
মিলিশিয়া কমান্ডার ইসমাইল খান দেশটিতে ‘হেরাতের সিংহ’ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। আফগানিস্তানের যুদ্ধে তার সম্পৃক্ততা সরকারবিরোধী বিদ্রোহের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়; যা ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এক মাস আগে আবারও সম্মুখসারিতে ইসমাইল খানের ফিরে আসা হেরাতের প্রতি তালেবানের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়টি পরিষ্কার করেছিল।
এসএস