শারীরিক সম্পর্কে স্ত্রীর সম্মতি লাগবেই: ভারতের হাইকোর্ট
বিবাহিত স্ত্রী হলেও শারীরিক সম্পর্কের সময় তার সম্মতি স্বামীকে নিতে হবে বলে যুগান্তকারী এক রায় দিয়েছেন ভারতের একটি আদালত। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কেরালার হাইকোর্টের বিচারপতি এক নারীর করা মামলায় ওই রায় ঘোষণা করেছেন।
মামলার আবেদনকারী নারী আদালতকে বলেছিলেন, অসুস্থ থাকলেও তার স্বামী তাকে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। কেরালা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি কওসার এডাপ্পাগাথ এবং বিচারপতি এ মুহাম্মদ মুস্তাক রায়ে বলেছেন, স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বামীর এই কর্মকাণ্ড বৈবাহিক ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে।
তারা বলেন, এই বৈবাহিক ধর্ষণ বিবাহ বিচ্ছেদেরও ন্যায়সঙ্গত কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অর্থাৎ যেখানে ধর্ষিতা ও ধর্ষকের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে; সেটাকে কোনও অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না।
কিন্তু কেরালা হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলছে, এটাকে চরম নৃশংসতা বলে গণ্য করাই যায়; যার ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনও মঞ্জুর করা সম্ভব।
কলকাতায় নারী অধিকার কর্মী ও অধ্যাপক শ্বাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, ভারতীয় উপমহাদেশের পটভূমিতে এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এখানে যৌন মিলনের ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতিও যে জরুরি, সেই স্বীকৃতির অভাব আছে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, এই বিশেষ মামলাটিতে স্ত্রী অভিযোগ করেছেন ১২ বছর ধরে তিনি স্বামীর অন্যায় যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে গিয়ে ক্লান্ত। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দু’বার পারিবারিক আদালতে গিয়েও কোনও প্রতিকার পাননি।
মামলার বিবরণী উল্লেখ করে শ্বাশ্বতী ঘোষ বলেন, যৌন মিলনে বাধ্য করার সময় তার স্বামী খেয়ালই করতেন না যে স্ত্রী অসুস্থ কি-না।এমনকি তার স্ত্রীর মা যেদিন মারা যান, সে দিনও তিনি তাকে যৌন মিলনে বাধ্য করেছেন। নিজেদের মেয়ের সামনেও মিলিত হয়েছেন। এমন চরম নৃশংসতাও আইনের চোখে এতদিন অপরাধ ছিল না। এটাই আক্ষেপের।
ভারতের নারী অধিকার কর্মীরা প্রায় এক সুরেই বলছেন, ভারতসহ এ অঞ্চলের পাকিস্তান, বাংলাদেশ সব দেশেই সামাজিকভাবে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে বিবাহিত স্ত্রীরা বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে মুখ খুললে পরিবার-এর ধারণা ভেঙে পড়বে।
কেরালা হাইকোর্টের রায় সেই ধারণাকে কিছুটা হলেও পাল্টাতে সাহায্য করবে বলে তাদের অনেকেই আশা করছেন। শাশ্বতী ঘোষের কথায়, ভারতের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপেও এই সমস্যার ব্যাপকতা বারবার ধরা পড়েছে।
‘ভারতের অসংখ্য নারী পারিবারিক সংস্কারের চাপে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হওয়াটাই তাদের ভবিতব্য। কারণ যে কোনও সময়, যখন খুশি যৌন মিলন স্বামীর অধিকার। তাদেরও যে কখনো কখনো অসম্মতি জানানোর অধিকার আছে, সেটাই আসলে স্ত্রীদের ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এসএস