ভূমধ্যসাগর থেকে প্রায় ১০০ অভিবাসী উদ্ধার
লিবিয়া থেকে অবৈধপথে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর থেকে প্রায় ১০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে জার্মানির এনজিও ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সি ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির বরাত দিয়ে রোববার (১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, এসব অভিবাসীদের মধ্যে অনেককেই আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজন তেল বা জ্বালানির কারণে মারাত্মক দগ্ধ ছিলেন। পেট্রোল বা নৌকার তেলের সঙ্গে সমুদ্রের পানি মিশ্রণের ফলে এই ধরনের রাসায়নিক বার্ন বা দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে।
আবহাওয়া ভালো হওয়ার কারণে সম্প্রতি লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও অন্যান্য এলাকা থেকে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন স্থান অভিমুখে অভিবাসীদের ভিড় বেড়েছে। অবৈধপথে ইউরোপে পৌঁছাতে ছোট ছোট নৌকায় করে অভিবাসীরা বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে।
সি ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ভূমধ্যসাগরে দু’টি নৌকা থেকে ৩৩ জন অভিবাসী উদ্ধার করে তাদের সি ওয়াচ-৩ জাহাজটি। অভিবাসীবাহী ওই দু’টি নৌকা লিবিয়ার কোস্টগার্ড আটক করেছিল।
উদ্ধারকৃত এই ৩৩ জনের মধ্যে একাকী অবস্থায় ৯ জন অল্পবয়সী ছিল। তাদের মধ্যে ৩ জন খুবই ছোট শিশু। এছাড়া একজন সাত মাস্বের অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলেন। রয়টার্স বলছে, উদ্ধারকৃতরা দক্ষিণ সুদান, তিউনিসিয়া, মরক্কো, আইভরি কোস্ট ও মালির নাগরিক। এছাড়া সি ওয়াচের উদ্ধারকারী জাহাজ দেখতে পেয়ে অনেকেই লিবীয় কোস্টগার্ডের জাহাজ থেকে পানিতে ঝাঁপ দেন।
এছাড়া, শুক্রবার ভোরে ভূমধ্যসাগরের লিবীয় অংশ থেকে ৬০ জনেরও বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করে সি ওয়াচ। তারা একটি কাঠের নৌকায় করে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছিলেন। উদ্ধরকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই লিবীয় নাগরিক।
এদিকে বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পেরিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টার সময় সাগরে ডুবে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে নতুন এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এই তথ্য জানায়।
আইওএম বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কমপক্ষে এক হাজার ১৪৬ জন মারা গেছেন। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টাকারী মানুষের সংখ্যা ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মধ্য-ভূমধ্যসাগরে ‘লিবিয়া থেকে ইতালি’ যাওয়ার পথটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এই পথে ডুবে মরেছে ৭৪১ জন। এরপর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম আফ্রিকা থেকে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপের পথ ছিল দ্বিতীয় প্রাণঘাতী; এই পথে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৫০ জন। এছাড়া পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের স্পেনমুখী পথে মারা গেছেন কমপক্ষে ১৪৯ জন এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গ্রিসের পথে প্রাণ গেছে ৬ জনের।
আইওএম বলেছে, অনেক জাহাজ ভেঙে ডুবে যাওয়ায় এবং শনাক্ত করতে না পারায় ইউরোপগামী ভূমধ্যসাগরের পথে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাটি বলেছে, চলতি মাসের প্রথম ছয় মাসে তিউনিশিয়ার উদ্ধার অভিযান গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ সাগর পথে ১৫ হাজারের বেশি পুরুষ, নারী ও শিশু উদ্ধারের পর ফেরত পাঠিয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি।
টিএম