করোনা মোকাবিলায় ভুল পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র : ডা. ফাউসি
করোনা মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ভুল পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চিকিৎসা বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. অ্যান্থনি ফাউসি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সরকারের উচিত গণটিকাদান কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরা বিষয়ক বিধিনিষেধ শিথিলের সময় এখনও আসেনি যুক্তরাষ্ট্রে।
সাক্ষাৎকারে ডা. ফাউসি বলেন, ‘সম্প্রতি গণটিকদান কর্মসূচিতে কিছুটা ঢিলেমি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্ভবত, আমরা আত্মতৃপ্তি বোধ করছি এই ভেবে যে, দেশের ৪৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগণকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছি।’
‘যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে- মহামারি মোকাবিলায় আমরা ভুল পথে হাঁটছি। করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং বর্তামানে এটি ছড়াচ্ছে টিকা না নেওয়া লোকজনদের মধ্যে। তাই মহামারিকে পরাস্ত করতে হলে টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানো এবং দেশের জনগণের অধিকাংশকে টিকার আওতায় আনার কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই।’
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩ কোটি ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৫ জন এবং মারা গেছেন মোট ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৭২ জন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর গণটিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দেন এবং ঘোষণা করেন, ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আগে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সেই লক্ষ্য অবশ্য পূরণ হয়নি, তবে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে।
কিন্তু তারপরও করোনায় দৈনিক সংক্রমণ এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি দেশটি। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ২৩২ জন। এছাড়া দেশটিতে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন ৫০ লাখ ৬০ হাজার ৪৯৪ জন, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
রোববারের সাক্ষাৎকারে ডা. ফাউসি বলেন, ‘আপনি যদি দেশের সাম্প্রতিক আক্রান্ত রোগীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর করেন, তাহলে দেখবেন- তাদের বেশিরভাগই করোনা টিকার একটি ডোজও নেননি। তাছাড়া এমন রোগীও প্রচুর পাওয়া যাবে, যারা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেননি।’
‘অর্থাৎ, মহামারি এখন ছড়াচ্ছে কিংবা বলা যায়, দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে জনসংখ্যার সেই অংশের মধ্যে, যাদের এখনও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মে এবং জুন মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুলাই থেকে আবার ঊর্ধ্বমূখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে করোনায় দৈনিক সংক্রমণের চিত্রে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, যে অঙ্গরাজ্যসমূহে টিকাদান তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে, সেসব রাজ্যেই প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দৈনিক করোনা সংক্রমণে শীর্ষে আছে ৩ অঙ্গরাজ্য- ফ্লোরিডা, টেক্সাস ও মিসৌরি।
সিডিসির সমালোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ও চিকিৎসাবিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল) সম্প্রতি মাস্ক পরা বিষয়ক বিধিনিষেধ খানিকটা শিথিল করেছে। এক বিবৃতিতে সিডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের জন্য মাস্ক পরা ‘আবশ্যিক’ নয়।
সাক্ষাৎকারে এই নির্দেশনারও সমালোচনা করেছেন ডা. ফাউসি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘করোনার অতিসংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এবং গবেষণায় ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে- মূল করোনাভাইরাসের তুলনায় এটি ৬০ শতাং বেশি সংক্রামক ও অনেক সময় টিকার ডোজকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।’
‘এ কারণে, যতদিন সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হচ্ছে, ততদিন অন্যান্যরা তো বটেই, যারা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তাদেরও নিয়মিত মাস্ক পরা উচিত। আমার মতে, সিডিসির উচিত মাস্ক পরা বিষয়ক তাদের সাম্প্রতিক নির্দেশনা পুর্নমূল্যায়ন করা।’
সূত্র : সিএনএন, বিবিসি
এসএমডব্লিউ