তালেবানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরে যাবে সব মার্কিন সেনা। কিন্তু তার আগে আফগান বাহিনীর সমর্থনে তালেবানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সামনের দিনগুলোতেও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করতে ওয়াশিংটন বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি।
রোববার (২৫ জুলাই) তিনি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের মতো আগামী সপ্তাহগুলোতেও বিমান হামলা অব্যাহত থাকবে। তবে আগস্ট মাসের পরও বিমান হামলা অব্যাহত থাকবে কি না, সেটা তিনি জানাননি।
দীর্ঘ দুই দশক যুদ্ধের পর বিধ্বস্ত অবস্থায় আফগানিস্তানকে রেখে দেশে ফিরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এই পরিস্থিতিতে একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে তালেবান। তাদের সঙ্গে কোনো ভাবেই পেরে উঠছে না আফগান সরকারি সেনা। সম্প্রতি সামরিকভাবে আরও সক্রিয় হয়েছে তালেবান। একের পর এক এলাকা দখল করে এবার তারা কার্যত ঘিরে ফেলেছে আঞ্চলিক রাজধানীগুলোকে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রোববার মার্কিন সামরিক বাহিনীর জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, (তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে) আফগান সেনাবাহিনীকে সমর্থন জানিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে সাংবাদিকদের একটি প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি। আগামী ৩১ আগস্টের পরও তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আফগান সেনাবাহিনীকে সমর্থন জানিয়ে যাবে। সেই সমর্থন সাধারণভাবে আকাশপথেই অব্যাহত থাকবে।’
জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা চলছে। যদি তালেবান আক্রমণ চালিয়ে যায় তাহলে আগামী সপ্তাহগুলোতে বিমান হামলা আরও বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তুত।’
মার্কিন সামরিক বাহিনীর এই জেনারেলের মতে, আগামী দিন ও সপ্তাহগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, ‘আমি মনে করি না, এটা সহজ কোনো রাস্তা। কিন্তু আমি এটাও মনে করি না যে, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ হবে।’
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের মধ্যেই কার্যত লড়াই চলছে দেশটির সরকারি সেনা ও তালেবান যোদ্ধাদের। রোববারও কান্দাহারের পাশে লড়াই হয়েছে। গত মাসে সেখান থেকে ২২ হাজার পরিবার বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলে গেছেন।
কান্দাহারে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এটা আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই শহরটিই ছিল তালেবানের ক্ষমতার মূল কেন্দ্র। ম্যাকেঞ্জি স্বীকার করেছেন যে, কান্দাহারেও হামলা করেছে মার্কিন বিমান।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, তালেবান সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। তবে তালেবান নেতারা তা স্বীকার করেননি। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, যেভাবে সাধারণ মানুষকে আটক করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে- তাদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। ভয় পেয়ে সাধারণ মানুষ তাই ঘর ছাড়ছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের অগ্রযাত্রা রুখতে প্রায় সারা দেশে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করে আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার। গভীর রাতে তালেবান যোদ্ধাদের হামলা থেকে দেশের শহরগুলোতে রক্ষা করতে গত শনিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির প্রশাসন।
আফগানিস্তানের মোট ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে মাত্র তিনটি ছাড়া বাকি ৩১টি প্রদেশে রাত্রিকালীন এই কারফিউ জারি করা হয়েছে। এই প্রদেশগুলোতে প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। এই সময়ের মধ্যে কেউই ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এছাড়া কারফিউয়ের আওতার বাইরে থাকা তিনটি প্রদেশ হচ্ছে- কাবুল, পাঞ্জশির এবং নানগারহার।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।
অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন।
সূত্র: সিএনএন, ডয়চে ভেলে
টিএম