তালেবানগোষ্ঠীর গতিরোধ করাই প্রথম কাজ : পেন্টাগন প্রধান
পুরো আফগানিস্তানের দখল নিতে সম্প্রতি যে গতিতে তালেবানগোষ্ঠী এগোচ্ছে, তা রোধ করাই আফগান বাহিনীর প্রথম কাজ হওয়া উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও দেশটির সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের প্রধান নির্বাহী লয়েড অস্টিন।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র তালেবান সদস্যদের গতিরোধ করার পরই তাদের দখলকৃত এলাকাসমূহ উদ্ধার করা সম্ভব।
সম্প্রতি আলাস্কা সফরে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকাসমূহ ঘিরে ফেলা শুরু করেছে। এবং তারা খুব দ্রুত গতিতে রাজধানীর দিকে আসার চেষ্টা করছে।’
‘আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী তাদের থামাতে পারবে কিনা তা নির্ধারণের আগে আমি মনে করি, তাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত তালেবানের অগ্রযাত্রা ধীর করে তোলা। তারপর তাদের দখলকৃত এলাকাসমূহ পুনরুদ্ধারের অভিযান শুরু করার যেতে পারে।’
সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তালেবানদের রুখে দেওয়ার সামর্থ আফগান সেনাবাহিনী ও দেশটির সাধারণ জনগণের আছে, তারপরও সেখানে কী ঘটে তা আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি।’
চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন- ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।
বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু কট্টরপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান। বুধবার এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে পেন্টাগন জানিয়েছে, তাদের কাছে থাক তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৪১৯ টি জেলার অর্ধেকেরও বেশির দখল নিয়ে ফেলেছে তালেবান।
অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ও পরিকল্পিতভাবে তালেবান গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক এই অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে দিশেহারা হয়ে পিছু হটছিলেন আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যদের সহযোগিতা শুরুর পর থেকে আফগান সামরিক বাহিনীও তালেবানগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা শুরু করেছে।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শনিবারের বিবৃতি অনুযায়ী, আফগান বিমান বাহিনীর হামলায় দেশটির জাওজান ও হেলমান্দ প্রদেশে অন্তত ৩৩ তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান সম্প্রতি পুরো আফগানিস্তান দখলের অভিযানে নেমেছে এবং তাদের এই অভিযানের কারণে আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানরত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।
তাই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিমান হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে আফগান সেনা বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, তালেবানদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে আফগানিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে মার্কিন সেনা সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে জন কিরবি বলেছিলেন, ‘আফগান সেনা বাহিনী এএনডিএসএফকে (আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স) সহযোগিতা করতে আফগানিস্তানে তালেবান ঘাঁটিসমূহ লক্ষ্য করে বিমান হামলা পরিচালনা করছে মার্কিন সেনা সদস্যরা।’
তার আগের দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ মার্ক মিলি বুধবার বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১৭ টিতে সশস্ত্র তালেবান বিদ্রোহীদের চাপ বাড়ছে; এবং দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুরো আফগানিস্তান তারা দখল করে নেবে।
এএফপিকে মার্ক মিলি বলেছিলেন, ‘যে পর্ব আমরা শেষ করে এসেছি, সম্ভবত তার একটি নতুন অধ্যায় ফের আমাদের শুরু করতে হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আফগান বাহিনীর জন্য আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে এবং থমকে যাওয়া শান্তি আলোচনা চালু করতে কূটনৈতিক উদ্যোগ দ্বিগুণ করবেন।
আফগানিস্তানের শরণার্থীদের জরুরি চাহিদা মেটাতে শুক্রবার ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল অনুমোদন করেছেন বাইডেন।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ