এলজিবিটি আইনের প্রতিবাদে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
হাঙ্গেরির ডানপন্থি সরকারের বিভিন্ন নীতি, বিশেষ করে এলজিবিটি সংক্রান্ত একটি আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সেখানকার হাজারো মানুষ।
শনিবার হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে আয়োজিত বার্ষিক প্রাইড প্যারেডে অংশ নিয়ে হাজারো এলজিবিটি সমর্থক দেশটির সরকারের ওপর নিজেদের ক্ষোভ দেখান।
আয়োজকরা আগে থেকেই আশা করছিলে এতে বিপুল মানুষ অংশ নেবেন। যারা অংশ নিতে ইচ্ছুক ছিলেন তাদের আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরর্বানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে নিজেদের ক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানানো হচ্ছিল।
বুদাপেস্ট প্রাইডের মুখপাত্র জোজো মাজেরসিক বলছেন, এবারের পদযাত্রা কেবল উদযাপন ও এলজিবিটি আন্দোলনের ঐতিহাসিক সংগ্রামের সাথে সংহতি নয়, বরং সমকামী, উভকামী, হিজড়া, রূপান্তরকামীদের লক্ষ্য করে অরবানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ।
এপিকে তিনি বলেছেন, এ ধরনের মানুষরা এখন ভীত, তারা মনে করেন এ দেশে তাদের আর কোনো ভবিষ্যত নেই।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সমকামিতা বা লিঙ্গ পরিবর্তন সংক্রান্ত কনটেন্ট নিষিদ্ধ করে গেল জুনে একটি আইন পাস হয় হাঙ্গেরির সংসদে। বিতর্কিত ওই আইনের প্রতিবাদই করা হয়েছে শনিবারের পদযাত্রায়।
হাঙ্গেরির সরকার বলছে, শিশুদের ভালোর জন্যই এমন আইন করা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের সমালোচকরা এটিকে রাশিয়ার ২০১৩ সালের গে প্রোপাগান্ডা আইনের মতো বলে মনে করছেন, যেখানে সমকামকে পেডোফিলিয়া বা শিশুদের প্রতি কামানুভূতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। এবং আসন্ন নির্বাচনে রক্ষণশীল ভোটারদের দলে টানতে এমনটা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হাঙ্গেরি। ফলে এ ইউনিয়নের বহু রাজনীতিবিদও আইনটির কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ জোটের নির্বাহী কমিশন আইনটিকে এলজিবিটির অধিকার লঙ্ঘন বলেও আখ্যায়িত করেছে।
শনিবারের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ১৬ বছরের মিরা ন্যাগি। তিনি বলছেন, এ বছরের পদযাত্রায় আলাদা একটা বিশেষত্ব আছে। এ বছরটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে অনেক ঝুঁকি আছে। আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমার পরিকল্পনা হলো- পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তবে আমি হাঙ্গেরি ছাড়বো।
নতুন আইনে আরও বলা হয়েছে, স্কুলগুলোতে যৌনতা সংক্রান্ত শিক্ষা কেবল সরকার অনুমোদিত নাগরিক সংস্থাগুলোই দিতে পারবে।
বুধবার অরব্যান ঘোষণা দেন যে, আইনের সমর্থনে তিনি একটি গণভোটের আয়োজন করবেন। এ ভোটে মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, যৌনতা বিষয়ক কোনো আলোচনা স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে করা উচিৎ কি না।
তবে এ গণভোটে যেসব প্রশ্ন রাখা হচ্ছে তার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে মাজেরসিকের। তিনি মনে করেন, এটা সরকারে প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেইনের অংশ এবং এর মাধ্যমে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের প্রতি মানুষকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলছেন, আমি অনেকের কাছে শুনেছি তারা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, এবং তার আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। আর এ নির্বাচনের ফল আরও অনেককে বলে দেবে তারা দেশে থাকবে না কি চলে যাবে।
সূত্র : ইউএসএ টুডে।