তালেবান ইস্যুতে আফগান প্রেসিডেন্ট গনিকে আশ্বাস বাইডেনের
আফগানিস্তানে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবানদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে এমন আশ্বাসই দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ফোনালাপে উভয় দেশের প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, আফাগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তালেবান গোষ্ঠী যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক আচরণ ও সংঘাতপ্রবণ মনোভাব স্পষ্টতই সেসব প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী।’
একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও আফগানিস্তান দখলে তালেবানের সাম্প্রতিক অভিযানের নিন্দা জানানো হয়েছে। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক পরিকল্পিত হামলা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসমূহ ধ্বংস ও দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা চালিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্ক। ভয়াবহ সেই হামলায় সম্পূর্ণ ধসে পড়ে বহুতল সেই টাওয়ার দু’টি, প্রাণ যায় হাজারেরও বেশি মানুষের। আল কায়দা নেটওয়ার্কের সে সময়কার প্রধান ঘাঁটি বা হেড কোয়ার্টার ছিল তালেবান শাসিত আফগানিস্তান।
টুইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছরই আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনা বাহিনী এবং সেই অভিযানে পতন হয় দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের।
প্রায় ২০ বছর পর ২০২১ সালের এপ্রিল আফগানিস্তানে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই ঘোষণায় তিনি বলেন, চলতি বছর ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।
বাইডেনের ঘোষণার পর থেকে একে একে মার্কিন সেনাসদস্যদের দল আফগানিস্তান ত্যাগ করতে থাকে। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ মার্কিন ও ন্যাটো সেনা সদস্য দেশটি থেকে বিদায় নিয়েছেন।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু তালেবান গোষ্ঠী।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে সহিংসতা ও প্রাণহানি, যা উদ্বেগ তৈরী করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বরাজনীতিতে।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তালেবানদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে আফগানিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে মার্কিন সেনা সদস্যরা।
জন কিরবি বলেন, ‘আফগান সেনা বাহিনী এএনডিএসএফকে (আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স) সহযোগিতা করতে আফগানিস্তানে তালেবান ঘাঁটিসমূহ লক্ষ্য করে বিমান হামলা পরিচালনা করছে মার্কিন সেনা সদস্যরা।’
তার আগের দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ মার্ক মিলি বুধবার বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১৭ টিতে সশস্ত্র তালেবান বিদ্রোহীদের চাপ বাড়ছে; এবং দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুরো আফগানিস্তান তারা দখল করে নেবে।
এএফপিকে মার্ক মিলি বলেছিলেন, ‘যে পর্ব আমরা শেষ করে এসেছি, সম্ভবত তার একটি নতুন অধ্যায় ফের আমাদের শুরু করতে হতে পারে।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ