ফাইজার টিকার দুই ডোজের ব্যবধান বাড়ায় প্রতিরোধী শক্তি
করোনা টিকা ফাইজার-বায়োএনটেকের দুই ডোজের মধ্যকার ব্যবধান মানবদেহে করোনা প্রতিরোধী শক্তি বাড়ায়। যুক্তরাজ্যের প্রধান ও বৃহত্তম সরকারি স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেমের (এনএইচএস) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথা জানা গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইজার টিকার দুই ডোজের ব্যবধান তিন সপ্তাহের পরিবর্তে ছয় সপ্তাহে উন্নীত করা হলে মানবদেহে টি সেলের পরিমান অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে।
টি সেল হলো একপ্রকার কোষ, যা মানবদেহে অনুপ্রবেশকারী করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে একে নিষ্ক্রিয় করে। এনএইচএসের গবেষকরা বলছেন, ফাইজার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর থেকেই টি সেলের পরিমাণ বাড়তে থাকে মানব দেহে এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তা স্থায়ী হয়।
বৃহস্পতিবার এনএইচএসের এই গবেষক দলের জেষ্ঠ্য সদস্য ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুসানা ডুয়াঙ্কি এ সম্পর্কে বিবিসিকে বলেন, ‘ব্রিটেনে ডেল্টা ধরনের প্রকোপ বাড়ছে। করোনাভাইরাসের এই অতি সংক্রামক ধরনটি থেকে অধিকতর সুরক্ষা পেতে হলে টিকা গ্রহণকারীদের টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে।’
‘এখন কথা হলো, দু’ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কতখানি হলে তা টিকাগ্রহণকারীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে- ব্যবধানের আদর্শ সময়সীমা হচ্ছে আট সপ্তাহ। ফাইজার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হলে তা টিকা গ্রহণকারীরা সবচেয়ে উপকৃত হবেন।’
গবেষক দলের অপর সদস্য এবং যুক্তরাজ্যে নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেবেকা পায়েন বলেন, ‘ফাইজার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর থেকেই মানবদেহে প্রতিরোধী শক্তি গড়ে উঠতে থাকে এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তা সম্পূর্ণ হয়। তাই আপনি যদি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধী শক্তি চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে।’
এখনও কোনো চিকিৎসা সাময়িকীতে এই গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর পিআর রিভিউ ছাপা হয়নি। এ বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে রেবেকা পায়েন বলেন, ‘আমাদের গবেষণার একটি অংশ শেষ হয়েছে মাত্র। যে তথ্য আমরা পেয়েছি সেটির চিকিৎসাগত তাৎপর্য (ক্লিনিক্যাল সিগনিফিকেন্স) বোঝার জন্য আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।’
এদিকে, এনএইচএস এর এই সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। দেশটির টিকাদান বিষয়ক মন্ত্রী নাদিম জাহাউই বলেন, ‘সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফলাফল শুধু যুক্তরাজ্যের জন্যই নয়, বরং বিশ্বের জন্যও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ ধরণের গবেষণা আরও হওয়া উচিত; কারণ, এসব বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারব, করোনার বিরুদ্ধে আমাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে এবং টিকার দুই ডোজ নেওয়ার গুরুত্ব কতখানি।’
সমালোচকরা অবশ্য বলেছেন, এনএইচএসের এই প্রতিবেদন সরকারের বর্তমান টিকাদান নীতির পক্ষে গেছে। কারণ, চলতি বছর শুরুর দিকে যখন টিকার দুই ডোজের ব্যবধান তিন সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ করা হয়, তখন বৃটেন জুড়ে এর সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তার জেরে টিকার দুই ডোজের ব্যবধান ১২ সপ্তাহ থেকে আট সপ্তাহে নামিয়ে আনে দেশটির সরকার।
যুক্তরাজ্যে টিকাদান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহার করা হলেও সম্প্রতি এর পাশাপাশি ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকাও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ