বিক্ষোভ-সহিংসতায় দক্ষিণ আফ্রিকায় নিহত বেড়ে ৭২
দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান বিক্ষোভ, সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। দুর্নীতি ও আদালত অবমানার অভিযোগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন কার্যত সহিংসতা ও দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২০০-র বেশি মানুষকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ফুঁসে ওঠা এই বিক্ষোভ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত সোমবার রাতে দেশটির সোয়েটোর একটি শপিং সেন্টারে মালামাল লুট করার সময় মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের চালানো গুলিতে নিহত ১০ জনও রয়েছে।
বিবিসির প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভ ও সহিংসতার মাঝে দোকানগুলোতে লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডের সময় ডারবানের একটি ভবন থেকে একটি শিশুকে নিচে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে এখন পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সেনা সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ জানিয়েছে, সহিংসতা ও দাঙ্গায় উস্কানিদাতা ১২ জনকে তারা চিহ্নিত করেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা চলমান পরিস্থিতিকে তার দেশে ১৯৯০ সালের পর থেকে হওয়া সহিংসতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বলে আখ্যা দিয়েছেন। চলমান এই সহিংসতায় অগ্নিসংযোগ, মহাসড়ক অবরোধ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিং সেন্টার ও দোকান লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
সাবেক প্রেসিডেন্টকে কারাগারে পাঠানোর পর প্রাথমিক ভাবে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল জ্যাকব জুমার এলাকা কোয়াজুলু-নাটালে। রোববার থেকে তা দেশের সবচেয়ে বড় শহর জোহানেসবার্গসহ অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।
জ্যাকব জুমা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘুষসহ দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত ছিলেন তিনি ও তার সরকার। দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
অবশ্য ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। এ সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল- দেশের বিরোধীপক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটির সামনে তাকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জুমা সেখানে হাজির হননি। এরপরেই তার বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষণা করে আদালত। সোমবার দেশের সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন জ্যাকব জুমা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার প্রশাসনের লোকেরা যখন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করছিল, তখন তিনি চোখ বুঁজে ছিলেন।
টিএম