জনসনের টিকায় বিরল স্নায়ু জটিলতা, জনগণকে সতর্কবার্তা
যুক্তরাষ্ট্রে জনসনের এক ডোজের করোনা টিকা নেওয়ার পর অন্তত ১০০ জন বিরল স্নায়ুবিক ব্যাধি গিউলিয়ান ব্যারে সিনড্রোমে (জিবিএস) আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি, জিবিএস এর লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বা নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে এফডিএ।
জিবিএস হলো একপ্রকার স্নায়ুবিক ব্যাধি, যার প্রভাবে মানবদেহের দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা অ্যান্টিবডি মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষসমূহকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করতে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাংসপেশির দুর্বলতায় ভোগেন ও একসময় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। এই ব্যাধি গুরুতর রূপ নিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে।
করোনা টিকাসমূহের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার জন্য ভ্যাকসিন অ্যাডভার্স রিপোর্টিং সিস্টেম নামে একটি কমিটি গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবারের বিবৃতিতে এফডিএ কর্মকর্তারা সেই কমিটির বরাত দিয়ে বলেন, ‘ভ্যাকসিন অ্যাডভার্স রিপোর্টিং কমিটির তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসনের করোনা টিকা নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ১০০ জন জিবিএসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৫ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং একজন মারা গেছেন।’
আক্রান্তদের সবাই টিকা নেওয়ার ৪২ দিনের মধ্যে এই ব্যাধির শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে এফডিএর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যারা জনসনের টিকা নিয়েছেন, তাদের উদ্দেশে এফডিএর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- যদি টিকা নেওয়ার ৪২ দিনের মধ্যে কারো দেহে জিপিএসের উপসর্গ দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।’
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বিষয়ে এফডিএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সঙ্গে আলোচনা করেছে কোম্পানি।
সোমবার এক বিবৃতিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘সিডিসি ও এফডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য হলো- এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ জনসনের টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মাত্র এই সমস্যার শিকার হয়েছেন। সুতরাং জনসনের টিকার নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে জিবিএস দেখা দিয়েছে- এমন তথ্য সঠিক নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ২৮ লাখ মানুষ জনসনের এক ডোজের করোনা টিকা নিয়েছেন।
এদিকে, বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি জানিয়েছেন, অনুমোদিত যে কোনো করোনা টিকা যে পরিমাণ সুরক্ষা দেয়, সে বিবেচনা করা হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়।
বার্তাসংস্থা সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ওষুধেরই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। আপনি যদি কোটি কোটি মানুষকে কোনো একটি অনুমোদিত টিকার ডোজ দেন, অন্তত কয়েকজন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হবেন- এটা নিশ্চিত এবং এটিই স্বাভাবিক।’
‘এখন আমাদের বিবেচনা করতে হবে টিকা নেওয়ার উপকারিতার ব্যাপারটি। অর্থাৎ একটি অনুমোদিত টিকা যে পরিমাণ সুরক্ষা দিতে সক্ষম, তার অনুপাতে যদি আমরা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পর্যালোচনা করি, সেক্ষেত্রে আমি বলব- জনসনের টিকায় ঝুঁকির চাইতে উপকার অনেক বেশি।’
এর আগে গত এপ্রিলে জনসনের এক ডোজের করোনা টিকা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আটজন এবং তাদের তিনজন মারা গিয়েছিলেন। এর জেরে বেশ কিছুদিন জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সিডিসি।
সূত্র : সিএনএন
এসএমডব্লিউ