কিউবায় বিক্ষোভ, মুখোমুখি অবস্থানে সরকার-জনগণ
ক্যারিবিয়ান সাগরের তীরবর্তী দেশ কিউবায় ব্যাপকমাত্রায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। রাজাধানী হাভানাসহ বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে দেশটিতে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমসমূহ কিউবার এই বিক্ষোভকে ‘বিরল’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৩০ বছর পর এত বড় মাত্রায় বিক্ষোভ হলো দেশটিতে।
বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে রাজধানী হাভানা থেকে। রোববার বেলা ১১ টার দিকে হাভানার প্রধান সড়কসমূহে জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেলের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করেন তারা। পরে কিউবার পালমা সোরিয়ানো, সান্টিয়াগো, সান আন্তোনিও দে লস বানোসসহ বিভিন্ন ছোটবড় শহরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
হাভানার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মিরান্ডা লাজারা (৫৩) নামে এক নৃত্য শিক্ষক মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ‘আমরা খুবই কঠিন সময় পার করছি। দেশের সরকারব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এই দুঃসময় কাটবে না।’
সান আন্তোনিও দে লস বানোস শহরের বাসিন্দা কার্লিস রেমিরেজ জানিয়েছেন, ‘দেশে খাবার এবং ওষুধের দাম প্রায় আকাশছোঁয়া। লোডশেডিং দিন দিন অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে। বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। করোনা সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
‘এসব সংকট সমাধানের দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার যেহেতু এসব সমাধান করছে না, এ কারণে আমরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করছি।’
কিউবার প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল অবশ্য এই বিক্ষোভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভাড়াটে সৈন্যদের’ ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
রোববার সন্ধ্যায় দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়াটে সৈন্যরা কিউবাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে; কিন্তু তাদের এ ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না। আমরা দেশের সব বিপ্লবী, কমিউনিস্টদের আহ্বান জানাচ্ছি – আপনারা এই ভাড়াটে সেনাদের রুখে দিন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার হাভানায় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ, পিপার স্প্রে ছোড়ার পাশাপাশি অন্তত কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছেন।
এদিকে, কিউবার প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের লাতিন আমেরিকা বিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক জুলি চ্যাং এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘কিউবায় বিক্ষোভ এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে যে মুখোমুখী অবস্থান- তাতে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
‘যুক্তরাষ্ট্র কিউবার জনগণের অধিকার ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে রয়েছে। পাশপাশি, জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে কিউবার ক্ষমতাসীন সরকাকে আহ্বান জানাচ্ছে।’
ফিদেল কাস্ত্রোর হাত ধরে ১৯৫৯ সালে কিউবায় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণে আছে দেশটি।
একসময় কিউবার প্রধান মিত্র ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ছিল ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এর প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের জেরে ১৯৯৪ সালে কিউবায় বিশাল বিক্ষোভ হয়েছিল। তার প্রায় ৩০ বছর পর ফের বিক্ষোভ হচ্ছে দেশটিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত কিউবার জাতীয় আয়ের একটি বড় উৎস ছিল পর্যটন খাত। কিন্তু মহামারির কারণে গত প্রায় দেড় বছরে এই খাতটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটির অর্থনীতি এখন সীমাহীন চাপের মধ্যে আছে। খাদ্যপণ্যের দোকানগুলোতে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খাদ্য কিনতে না পারা কিউবায় নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে প্রতিদিনই কিউবায় বাড়ছে এ রোগে সংক্রমণ ও মৃত্যু। রোববার দেশটিতে করোনায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন ৪৭ জন। কিউবায় এটি একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।
সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি
এসএমডব্লিউ