চীনকে ‘বন্ধু’ বিবেচনা করছে তালেবান
আফগানিস্তানের তালেবান জানিয়েছে, চীনকে তারা বন্ধু বিবেচনা করছে। চীনকে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি আশ্বস্ত করেছে যে, কাবুলে ক্ষমতায় গেলে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিম যোদ্ধাদের ঠাঁই দেবে না। চীনের জন্য জিনজিয়াং ও উইঘুর সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণের দাবি করা তালেবান চীন নিয়ে এমন মন্তব্য করেছে। এদিকে ইতোমধ্যে চার্টার্ড ফ্লাইটে করে চীন আফগানিস্তান থেকে তাদের ২১০ নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে।
বেইজিং উদ্বিগ্ন এই কারণে যে তালেবান ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তান পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলনের (ইটিআইএম) জন্য কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে আল-কায়েদার সংশ্লিষ্টতা আছে। চীনের জিনজিয়াংয়ে এই গোষ্ঠী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করছে।
আফগানিস্তান পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলনের (ইটিআইএম) কেন্দ্র হওয়া নিয়ে চীনের উদ্বেগের কারণ হলো জিনজিয়াং আফগান সীমান্ত লাগোয়া। প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ চীনের এই প্রদেশটির সঙ্গে আফগানিস্তানের আট কিলোমিটারের সীমান্ত সংযোগ রয়েছে।
চীনের উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় রেখে তালেবানের মুখপাত্র সুহেইল শাহীন বলেছেন, তারা চীনকে আফগানিস্তানের বন্ধু মনে করে এবং তিনি আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে বেইজিংয়ের বিনিয়োগ নিয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরুর ব্যাপারে তারা আশাবাদী
তালেবানের ওই মুখপাত্র সুহেইল শাহীন আরও জানিয়েছেন, তালেবান আর জিনজিয়াং থেকে চীনের উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের আর দেশে প্রবেশের অনুমতি দেবে না। উল্লেখ্য, উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অনেকে এর আগে আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল।
তালেবান আল-কায়েদা অথবা অন্য কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে আফগানিস্তান থেকে আর তৎপরতা চালাতে দেবে না জানিয়ে হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আমরাও অনেক সময় চীনে থেকেছি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো।’
তালেবানের মুখপাত্র সুহেইল শাহীন বলেন, ‘চীন একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আমরা তাদের স্বাগত জানাই। যদি (চীনাদের) বিনিয়োগ থাকে তবে অবশ্যই আমরা (তালেবান) তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবো।’
আফগানিস্তান থেকে মার্কিস সেনা প্রত্যাহার হলে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে চলতি সপ্তাহেই ঘনিষ্ট মিত্র পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার বিষয়ে অবহিত করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তান নিয়ে বেইজিংয়ের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়টিও জড়িত।
চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বৈঠকে গত মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং শি বলেন, ‘চীন-পাকিস্তানের যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তির বিষয়টি রক্ষা করতে হবে। আফগানিস্তানে সমস্যাগুলো প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান ও চীনকে সেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের বিষয়গুলো।’
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ায় তালেবানের পুনরুত্থান কৌশলগতভাবে চীনের জন্য লাভবান হবে। কারণ হলো তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে আল-কায়েদা এবং তালেবান সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো নিয়ে ইসলামাবাদ ও বেইজিং উভয়ই উদ্বিগ্ন।
এএস