মাস্ক পরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাজ্যের জনগণ
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৯ জুলাই থেকে দেশটিতে করোনা বিষয়ে সরকারিভাবে জারি করা বিধিনিষেধসমূহ উঠে যাবে। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর সেখানকার জনগণ মাস্ক পরবেন কি না সে ব্যাপারে তাদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের গৃহায়ণমন্ত্রী রবার্ট জেনরিক।
সম্প্রতি বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু মারকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রবার্ট জেনরিক। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ১৯ জুলাই যেসব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে, তার মধ্যে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কিনা।
উত্তরে ব্রিটেনের গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রথমে দেশে চলমান টিকাদান কর্মসূচির নির্বাহীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এ কারণে যে, স্বল্পসময়ের মধ্যে দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তাদের তৎপরতার কারণেই আজ আমরা এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি যে এখন যুক্তরাজ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছে।’
‘কিন্তু আপনারা জানেন, দুর্যোগ এখনও কাটেনি। এমন একটি সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি, যখন প্রতিনিয়ত আমাদের করোনাভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান শিখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমি বলব, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দায়িত্বশীলতার বোধ বাড়াতে হবে এবং এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণকে।’
‘তবে ১৯ জুলাইয়ের পরও মাস্ক পরতে হবে কি না – এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে এখন আমার মন্তব্য করা উচিত হবে না। কারণ আর কয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।’
সরকার যদি মাস্ক পরা বিষয়ক বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে তার কোনো আপত্তি থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। কারণ ব্যক্তিগতভাবে মাস্ক পরতে আমার ভালো লাগে না।’
তবে তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সরকারের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। একবার বিবেচনা করুন- আজ আমরা এমন দিনে উপস্থিত হয়েছি যে মাস্ক পরতে হবে কি হবে না- তা ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করছে।’
‘এখন সময় এসেছে ব্রিটেনের জনগণের নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ব্রিটেনের জনগণ যথেষ্ট সচেতন ও দায়িত্বশীল। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’
এদিকে, গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিধিনিষেধে যুক্তরাজ্যের জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে রোববার এক মেইলবার্তায় বিবিসিকে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে ইংল্যান্ড, ওয়েলসসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক নির্যাতন বেড়ে গেছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। যদি সব বিধিনিষেধ তুলে না নেওয়া হয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবার, করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে সম্প্রতি দৈনিক সংক্রমণও বাড়ছে দেশটিতে। ফলে, ১৯ জুলাই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
তবে, দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- দেশে এই মুহূর্তে সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে ১৯ জুলাই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলে তা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত হবে।
মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগে আক্রান্ত, ,মৃত্যু ও সেরে ওঠাদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটারের চার্টে দেখা গেছে, শনিবার ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৮৮৫ জন এবং মারা গেছেন ১৮ জন।
যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) জানিয়েছে, গত ২৮ দিনে দেশটিতে সর্বোচ্চ নতুন আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে শনিবার এবং নতুন রোগীদের অধিকাংশই ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত।
যুক্তরাজ্যের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর চেয়ারম্যান ডা. চান্দ নাগপাল বিবিসিকে বলেন, ‘দেশে এখন করোনা সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলে তা শুধু একটি মারাত্মক ভুল নয়, বরং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।’
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ