করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ছে মানব পাচার, বলছে মার্কিন রিপোর্ট
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। অনেক দেশে মহামারির কারণে বন্ধ অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলো প্রাথমিকভাবে এই ধাক্কা সামাল দিতে পারলেও প্রশ্নের মুখে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশ।
এসব দেশে বেকারত্ব, কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একইসঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে মানব পাচারও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা একটি রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার রিপোর্টটি প্রকাশ করে বাইডেন প্রশাসন। ‘ট্র্যাফিকিং ইন পার্সনস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে করোনা পরিস্থিতিতে মানব পাচার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মহামারি মোকাবিলা করাই ছিল বিশ্বের সকল দেশের প্রধান লক্ষ্য। প্রতিটি দেশই তাদের হাতে থাকা সম্ভব সকল অবকাঠামো ও শক্তি দিয়ে এই মহামারি প্রতিরোধে কাজ করেছে।
ফলে এই সময়টাতে মানব পাচার রোধে চলমান বিভিন্ন কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে পাচারকারীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে সরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পাচারকারীদের মূল টার্গেট ছিল কাজ হারানো প্রবাসী শ্রমিকরা।
করোনা মহামারিতে বিদেশে আটকে পড়া শ্রমিকদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের অনেককেই নিজেদের প্রতারণার জালে আটকায় পাচারকারীরা। অনেক ক্ষেত্রেই সেসব শ্রমিকদের কর্মস্থলগুলোতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় তাদেরকে চিহ্নিত করাও সম্ভব হয়নি।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারত, নেপালের মতো দেশে গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র কিশোরীদের অনেককেই কোভিড পরিস্থিতির কারণে লেখাপড়া বন্ধ করতে বাধ হয়েছে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে স্কুল ছেড়ে যোগ দিতে হয়েছে বিভিন্ন কাজে। অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে কিশোরীদের বিয়ে দিয়েছে পরিবার।
লকডাউনের মধ্যে প্রতারণার কৌশল বদলে ফেলেছে ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের শিশু পাচারকারীরা। নির্দিষ্ট জায়গাগুলোর বদলে ক্রেতাদের বলে দেওয়া আস্তানায় পাঠানো হচ্ছে শিশুদের। এছাড়া কোভিড পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, উরুগুয়ের মতো দেশেও। বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় বহু নারীর সঙ্গেই জোর করে যৌন সম্পর্ক করার অভিযোগ উঠেছে সেসব দেশের অনেক বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে মানব পাচার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১৭টি দেশকে দোষারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। প্রতিবেদনে ১৮৮টি দেশের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং পাচারের বিরুদ্ধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে চারটি স্তরে দেশগুলোকে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম স্তরে রয়েছে শ্রেষ্ঠ তালিকা এবং তৃতীয় স্তরে সবচেয়ে খারাপ তালিকা। দুটি মধ্যম স্তর রয়েছে: স্তর ২ এবং স্তর ২ পর্যবেক্ষণ তালিকা। যে দেশসমূহকে তৃতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এবং আন্তর্জাতিক সহায়তাও সীমিত করা হতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, এটি (মানব পাচার) বিশ্বব্যাপী একটি সংকট, এটি মানবিক দুর্দশার এক বিরাট উৎস। তিনি আরও বলেন, শিশুসহ মোট ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে। এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং একইসঙ্গে মানব মর্যাদাকে ছোট করে।
টিএম