টিকার দুই ডোজে ডেল্টার বিরুদ্ধে সুরক্ষা : ইএমএ
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের অতি-সংক্রামক ভারতীয় ধরন ডেল্টার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ সুরক্ষা দেয় বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে ইউরোপজুড়ে তৃতীয় ঢেউয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার ইএমএ এই আশার কথা শুনিয়েছে।
ইএমএর ভ্যাকসিন স্ট্র্যাটেজির প্রধান মার্কো ক্যাভালেরি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থাটি সে ব্যাপারে সচেতন আছে। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে এটা মনে হচ্ছে যে— ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদন পাওয়া চারটি ভ্যাকসিনই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া করোনার সব প্রজাতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিচ্ছে।
ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি বলছে, করোনাভাইরাসের অনুমোদিত টিকা প্রয়োগের তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনগুলোর দু’টি ডোজ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এছাড়া ল্যাবে পরীক্ষাতেও দেখা গেছে, ভ্যাকসিনগুলোর অ্যান্টিবডি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। আর এগুলো খুব আশ্বস্ত হওয়ার মতো সংবাদ।
বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে করোনাভাইরাসের চারটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই চারটি ভ্যাকসিন হলো: ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে যখন টিকাদান কার্যক্রম জোরাল করা হচ্ছে, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওই অঞ্চলে সংক্রমণের গতি দুই মাস নিম্নমুখী থাকার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ব্রিটেনে উৎপত্তি হওয়া আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ডেল্টার সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপ আবারও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।
ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা তাদের টিকা তথাকথিত ডেল্টা প্ল্যাসসহ করোনাভাইরাসের সব নতুন ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর কি-না তা পরীক্ষা করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কো ক্যাভালেরি বলেছেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে; যা গত কয়েক মাস ধরে উদ্ভূত হয়েছে এবং আমরা আরও কিছু ধরনের উদ্ভব হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছি।
ইউরোপে করোনার তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য : ডব্লিউএইচও
‘১০ সপ্তাহ ধরে ইউরোপজুড়ে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে নিম্নমুখী গতি ছিল, তার অবসান ঘটছে। ইউরোপের নাগরিক এবং আইনপ্রণেতারা যদি সুশৃঙ্খল না থাকেন তাহলে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ অনিবার্য।’ বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপের প্রধান হ্যান ক্লুগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্কবাতা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, অবাধ চলাফেরা, ভ্রমণ, জনসমাগম এবং সামাজিক বিধি-নিষেধ শিথিলের কারণে গত সপ্তাহে ইউরোপজুড়ে করোনার নতুন সংক্রমণ প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডেল্টা ছড়িয়েছে প্রায় ১০০ দেশে
এদিকে, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন পর্যন্ত প্রায় একশ দেশে ছড়িয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি বলছে, আগামী মাসগুলোতে করোনার অতিসংক্রামক এই ধরন বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করবে।
সাপ্তাহিক হালনাগাদ তথ্যে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ‘গত ২৯ জুন পর্যন্ত বিশ্বের ৯৬টি দেশে ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। তবে নতুন ধরন শনাক্তে সিকোয়েন্সিং ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো অনেক দেশে ছড়ালেও তা জানা যায়নি।’
করোনার নতুন এই ধরনটি যেসব দেশে শনাক্ত হয়েছে সেসব দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে জানিয়ে সংস্থাটি আরও বলেছে, এতে করে এসব দেশে করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর সঙ্গে বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা।
ডেল্টা ধরনের অতিমাত্রায় সংক্রমিত করার সক্ষমতার বিষয়টির কথা জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ধারণা করা হচ্ছে এই ধরন তার বৈশিষ্টের কারণে অন্য ধরনগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে এবং আগামী মাসগুলোয় আধিপত্য বিস্তার করবে বিশ্বে।’
ডব্লিউএইচও বলছে, আলফা (প্রথম শনাক্ত হয় ব্রিটেনে) ধরন ১৭২টি দেশে, বেটা (প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়) ১২০টি দেশে, ডেল্টা (প্রথম শনাক্ত হয় ভারতে) ৯৬টি দেশে এবং গামা (প্রথম শনাক্ত হয় ব্রাজিলে) ধরন ৭২ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস