দেশজুড়ে ছড়িয়েছে ডেল্টা, মহামারির নতুন হুমকিতে অস্ট্রেলিয়া
করোনাভাইরাসের অতি-সংক্রামক ভারতীয় ধরন ডেল্টার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সিডনিতে দুই সপ্তাহের লকডাউন জারি করেছে অস্ট্রেলিয়া। একই সঙ্গে দেশটির আরও বেশ কিছু শহরে নতুন করে করোনা বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। এদিকে, দেশজুড়ে করোনার ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় সোমবার অস্ট্রেলিয়ার কোভিড-১৯ মোকাবিলা কমিটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ বা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বর্তমানে লকডাউনে অথবা করোনা সংশ্লিষ্ট বিধি-নিষেধের আওতায় আছেন। দেশটির প্রায় প্রত্যেক অঞ্চল এবং ভূখণ্ডে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামলানো নিয়ে বেশ চাপের মুখে পড়েছেন।
বিবিসি বলছে, অতি-সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় সিডনিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই শহরে এখন পর্যন্ত ডেল্টায় আক্রান্ত ১২৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়াও দেশটির নর্দার্ন টেরিটরি, কুইনসল্যান্ড এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতেও ডেল্টার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি দেশের জন্য সঙ্কটময় এক মুহূর্ত। সংক্রমণের সংখ্যা নিম্নমুখী রাখতে সীমান্ত বন্ধ এবং লকডাউন জারি রাখতে হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে একই সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবারই প্রথম শনাক্ত হয়েছে।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জোস ফ্রাইডেনবার্গ এবিসি নিউজকে বলেছেন, আমি মনে করি, আমরা করোনার অতি-সংক্রামক ডেল্টা প্রজাতির সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই মহামারির নতুন একটি পর্যায়ে প্রবেশ করছি।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর সিডনিতে দুই সপ্তাহের, ডারউইনে দু’দিনের লকডাউন এবং অন্য চারটি প্রদেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। ফ্রাইডেনবার্গ বলেছেন, সোমবার আরও পরের দিকে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনকে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দেবেন দেশের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং বেশ কিছু এলাকায় জনসাধারণের সমাগমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কুইন্সল্যান্ড প্রদেশও। ভিক্টোরিয়া প্রদেশের রাজধানী মেলবোর্ন এবং দেশটির রাজধানী ক্যানবেরাতেও করোনা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইটের একজন কেবিন ক্রু ব্রিসবেন, মেলবার্ন এবং গোল্ড কোস্টে পরিচালিত ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনের পর করোনা আক্রান্ত হওয়ায় শত শত বিমানযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনিতে ক্যাফে, শপিং সেন্টার এবং গণপরিবহনসহ কয়েক ডজন স্থানকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অস্ট্রেলিয়া অনেকাংশে সফল হয়েছিল। কিন্তু দেশটিতে নতুন করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই সফলতা মলিন হতে বসেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৪৫০ জনের বেশি এবং মারা গেছেন ৯১০ জন।
লকডাউন, কঠোর সামাজিক দূরত্ব বিধি এবং দ্রুত কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে দেশটি করোনার প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়। কিন্তু দেশটিতে অতি-সংক্রামক ডেল্টা ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
এসএস