তালেবানের দাপট বাড়ছে, বাড়িঘর ছাড়ছে মানুষ
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত তালেবানের সঙ্গে দেশটির সরকারি বাহিনীর লড়াই জোরালো হচ্ছে। আল-জাজিরা রোববার জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে দেশটির কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী শহর কুন্দুজ থেকে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। রোববার এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা।
জানা যাচ্ছে, শুধু কুন্দুজ নয় কান্দাহার ও বাঘলানেও দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। আফগান সরকারের বাহিনী তালেবানের কাছ থেকে এসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করছেন। কিন্তু অনেক এলাকায় এখনো তালেবানের দখলে।
যুক্তরাষ্ট্র ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া শুরুর পর থেকে তালেবানের সহিংস হামলা বাড়তে থাকে। মার্কিন সেনারা দেশে ফিরতে শুরু করলে তালেবান অনেকগুলো জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসন চালায়। ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবানকে। এরপর থেকেই তালেবানের সঙ্গে ন্যাটো ও আফগান বাহিনীর লড়াই চলছে। এখনো কুন্দুজ শহরের পাশের এলাকা রয়েছে তালেবানের দখলে।
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে তালেবান দুই বার স্বল্প সময়ের জন্য হলেও শহরটির দখল নিয়েছিল। এখন শহরের আশপাশের জেলাগুলো তাদের দখলে রয়েছে। সম্প্রতি তাজিকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া একটি জেলাও তালেবান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
কুন্দুজের শরণার্থী বিভাগের পরিচালক গোলাম শাখি রাসূলি এএফপিকে বলেছেন, দুই পক্ষের এ লড়াইয়ে আনুমানিক ৫ হাজার পরিবার বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে দুই হাজার রাজধানী কাবুল কিংবা অন্য প্রদেশগুলোতে চলে গেছেন।
রহমতুল্লাহ হামনাওয়া নামে কুন্দুজের এক সাংবাদিক আল-জাজিরাকে বলেছেন, তার পরিবার শহরের একটি অঞ্চলে বাস করতো। কিন্তু সংঘাত বাড়তে থাকায় বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সেখানেও কতদিন থাকতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা সারা রাত গুলির শব্দ ও সংঘর্ষের শব্দ শুনতে পাই। বিগত এক সপ্তাহ ধরে শহরের বিভিন্ন অংশে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করেছেন। শুধু শহর নয় শহরের আশপাশের এলাকাগুলোতেও সংঘর্ষ চলছে।’
কুন্দুজ প্রদেশের আইনপ্রণেতা গোলাম রব্বানী বলেন, সংঘাত প্রতিদিন বাড়ছে। অনেকে শহরের মধ্যে এক স্কুলে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে খাবারসহ অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে সংখ্যাটা আরও বাড়লে পরিস্থিতি বিরুপ আকার ধারণ করবে।’
তালেবানের দাবি, তারা কুনদুজের রাজধানী বাদে পুরো প্রদেশেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কেবল রাজধানীটাই এখন সরকারি বাহিনীর হাতে আছে। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, সরকারি বাহিনী বেশ কিছু জেলা পুনর্দখল করতে পেরেছে এবং অভিযান চলছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের পরও আফগানিস্তানকে সহায়তা, সমর্থন দিয়ে যাবে তার দেশ। তবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আর থাকবে না।
এএস