টিকা না পাওয়া লোকজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ডেল্টায় : ডব্লিউএইচও
বিশ্বের ৮৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা প্রজাতিকে এখন পর্যন্ত ‘সর্বাধিক সংক্রামক’ বলে বর্ণনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, টিকা না পাওয়া লোকজনের মাঝে এই প্রজাতিটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমি জানি— বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ডেল্টা প্রজাতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এটি নিয়ে ডব্লিউএইচও-ও উদ্বিগ্ন।
করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন প্রথমে ভারতে শনাক্ত হয়েছিল। জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে গেব্রেইয়েসুস বলেন, এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের প্রজাতিগুলোর মধ্যে ডেল্টাই সর্বোচ্চ সংক্রামক। যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যেই এই প্রজাতিটি দ্রুত সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও কিছু কিছু দেশে জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক দূরত্ব বিধি শিথিল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান বলেন, বেশি রোগী মানে হাসপাতালে বেশি ভর্তি। এছাড়া এটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছে। এর ফলে মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ছে।
কোভিড-১৯ এর নতুন প্রজাতিগুলো প্রত্যাশিতই এবং আরও নতুন প্রজাতি শনাক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ভাইরাস এটাই করে, তাদের বিবর্তন ঘটে— তবে আমরা সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ভ্যারিয়েন্টের উত্থান ঠেকাতে পারি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল লিড ডা. মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছেন, ডেল্টা প্রজাতি একটি বিপজ্জনক ভাইরাস; যা আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অতিসংক্রামক। আলফা ভাইরাসও ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশে ঢুকে পড়ার পর অত্যন্ত সংক্রমণ ঘটিয়েছিল।
তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি আরও বেশি সংক্রামক। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ডব্লিউএইচও ভাইরাসটির সংক্রমণের উল্লম্ফন দেখেছে।
ইউরোপের অনেক দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে এই অঞ্চলে এখনও খেলাধুলা কিংবা ধর্মীয় সমাবেশ অথবা বারবিকিউ পার্টিসহ বেশ কিছু ক্রীড়াসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি রয়েছে এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তাদের মধ্যে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে যারা টিকা নেননি।
তিনি বলেন, কিছু দেশে ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষের উচ্চ হার রয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে এখনও টিকার আওতায় আনা যায়নি। এছাড়া অনেক মানুষ এখনও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাননি অথবা ডোজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার অন্যান্য ধরনে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অবিশ্বাস্য রকম কমাতে সক্ষম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল লিড বলেন, ভাইরাস অব্যাহতভাবে বিবর্তন ঘটাবে। এবং এখন পর্যন্ত আমাদের জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা কাজ করছে। আমাদের ভ্যাকসিন, ডায়াগনোস্টিকস এবং থেরাপি কাজ করছে। কিন্তু এমন একটি সময় হয়তো আসবে, তখন এসব ব্যবস্থা কাজ করবে না। সংক্রমণ নিম্নমুখী রাখা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের একযোগে এ ধরনের কিছু কাজ করা দরকার।
গত ২২ জুন সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারিবিষয়ক হালনাগাদ তথ্যে ডব্লিউএইচও বলছে, আলফা ভ্যারিয়েন্ট এখন পর্যন্ত ১৭০টি দেশ, ভূখণ্ডে অথবা অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বেটা ভ্যারিয়েন্ট ১১৯টি দেশ, গামা ৭১টি এবং ডেল্টা ৮৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে।
এসএস