করোনায় বিপর্যস্ত ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করে বেড়েছে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২০ লাখেরও বেশি রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী জাকার্তাসহ প্রায় সারা দেশেই হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শনিবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মোট ২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় মহামারির শুরু থেকে শনিবার পর্যন্ত ২০ লাখেরও বেশি করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিপুলসংখ্যক নতুন করোনা রোগী শনাক্তের কারণে দেশটির রাজধানী জাকার্তাসহ মহামারিতে জর্জরিত এলাকাগুলোর হাসপাতালগুলোতে ৭৫ শতাংশেরও বেশি রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ধরন-সহ ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্তদের মাঝে ভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ইন্দোনেশীয় দেতিক নিউজ ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান চাপ সামাল দিতে জাকার্তার হাসপাতালগুলোতে জরুরি তাঁবু টানিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দেশটির উত্তর সুমাত্রা প্রদেশের রাজধানী মেদান-এ গত ৬ মাসে ১৮০০ শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসক ড. ইনকে নাদিয়া ডি লুবিস। এর মধ্যে ১৪ জন মারা গেছে। ড. নাদিয়া ওই এলাকার করোনা মহামারি মোকাবিলা বিষয়ক টাস্কফোর্সেরও সদস্য।
তিনি আরও জানান, আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বয়সী, অন্যদিকে আক্রান্তদের এক-চতুর্থাংশ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, ইন্দোনেশিয়া ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হয়েছে। এসময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘দ্রুত ও কার্যকর নীতি’ প্রণয়নের অঙ্গীকারও করেন তিনি।
আলজাজিরা জানিয়েছে, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে গত প্রায় দেড় বছরে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় এক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো ওই এক হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ৪০১ জন চিকিৎসকও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।
এছাড়া করোনা টিকা নেওয়ার পরও দেশটির সেন্ট্রাল জাভা এলাকার ৩০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে টিকা দেওয়ার পর এতো বিপুলসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী ফের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় চীনের তৈরি সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ ইন্দোনেশিয়া মোটামুটি এই একটি টিকার ওপরই ভরসা করেছে এবং আগামী বছরের মধ্যে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে চীনা টিকা দেওয়ার মাধ্যমেই সফলভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে চাচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ইকা মুলিয়ানা বলছেন, এই এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের দ্রুতগতিতে বাড়ার পেছনে আক্রান্ত রোগীদের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে ভাইরাসের নতুন ধরনকেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পশ্চিম জাভা প্রদেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর ধারণক্ষমতার ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কোনো হাসপাতালে এই সংখ্যা শতভাগও ছাড়িয়ে গেছে। এই হারে রোগী বাড়তে থাকায় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।’
এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি ও সংক্রমিতদের মধ্যে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির কারণে ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভার বহু এলাকায় লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম