ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। ‘আরও বেশি সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার আশঙ্কা’ থেকেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) জানিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন কংগ্রেসে হামলা ও সহিংসতায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট গত বুধবার ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয় টুইটার। ১২ ঘণ্টা শেষে বৃহস্পতিবার অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হলেও পরদিন শুক্রবারই সেটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিল সংস্থাটি।
ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার (অনুসারী) সংখ্যা ছিল আট কোটি ৮০ লাখ।
বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলায় নারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। টুইটার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প উসকানিমূলক বক্তব্য রাখেন এবং এরপরই ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
টুইটার জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া সাম্প্রতিক পোস্টগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবারও দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
বুধবার জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করতে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশন বসে। সেসময় অধিবেশন বানচাল করতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেসে হামলা চালায় এবং তাতে ঘটনার দিন অন্তত চারজন নিহত হয়। পরে মারা যান আরও এক পুলিশ কর্মকর্তা।
এছাড়া ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটাল ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায়। এ ঘটনাকে সমর্থন করে ট্রাম্প নিজেই টুইটার ও ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি হামলাকারীদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলে অভিহিত করেন।
এর আগে ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালাতে সমর্থকদের প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে টুইটারের পাশাপাশি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামেও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন ট্রাম্প। ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে তার অ্যাকাউন্টের ওপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকলেও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১২ ঘণ্টা পর নিজের অ্যাকাউন্ট ফিরে পেয়ে ফের টুইটারে সরব হয়েছিলেন ট্রাম্প।
অ্যাকাউন্ট ফিরে পেয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টুইটারে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। অথচ এর আগ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির প্রেসিডেন্টের সুর ছিল অন্যরকম।
এমনকি গত বুধবারও তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের বিষয়টি স্বীকার না করে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে ফলাফল প্রত্যাখান করে আসছিলেন তিনি।
এদিকে ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের বেশ কিছু কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিক মালভেনি। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের একজন।
তালিকায় রয়েছেন- ডেপুটি প্রেস সচিব সারা ম্যাথুজ, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ স্টেফানি গ্রিশাম, হোয়াইট হাউসের সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিচেটা ও উপদেষ্টা ম্যাট পটিঙ্গার।
গত বুধবার থেকেই ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম। এবার টুইটারও তার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিলো। সময়টা যেন মোটেই ভালো যাচ্ছে না ট্রাম্পের।
সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা
টিএম