শেষ মুহূর্তে বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতে যুক্তরাষ্ট্রে আশরাফ গনি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। সেখানে তার সঙ্গে থাকবেন আরেক আফগান নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহও। শুক্রবার (২৫ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে অংশ নিতে আশরাফ গনি ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটনে পৌঁছে গেছেন। শুক্রবারের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আফগানিস্তানের জন্য একাধিক ইস্যুতে সাহায্য চাইতে পারেন তিনি। তবে ওয়াশিংটন আফগানিস্তানকে কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল।
যুক্তরাষ্ট্র-সহ সামরিক জোট ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরাতে শুরু করে দিয়েছে। বাইডেন জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশটি থেকে সকল বিদেশী সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।
কিন্তু সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো তাদের সেনা যত সরিয়ে নিচ্ছে, আফগানিস্তানে ততই শক্তিবৃদ্ধি করছে তালেবান। মে মাসের মধ্যে দেশের প্রায় ৫০টির বেশি জেলা তারা দখল করে নিয়েছে।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত দেবোরাহ লিয়ন্স সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে ৩৭০টি জেলা আছে, তার মধ্যে ৫০টিরও বেশি তালেবান ইতোমধ্যেই দখল করে নিয়েছে। আঞ্চলিক রাজধানীগুলোকে প্রায় ঘিরে ফেলেছে তারা। শক্তিবৃদ্ধি করে সেই অঞ্চলগুলোও তারা যে কোনো সময় দখল করে নিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন আশরাফ গনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেনা সরানোর পরেও যুক্তরাষ্ট্র যেন আফগান সরকারের পাশে থাকে, বাইডেনের কাছে সেই আবেদনই জানাবেন গনি। পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যও চাইতে পারেন তিনি।
তবে বাইডেন এ বিষয়ে আফগান প্রেসিডেন্টকে তাকে কতটা আশ্বস্ত করবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, অনেক আগেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারতো আফগান সরকার। কিন্তু সে কাজ তারা করেনি। আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর বিষয়টিকেও বাইডেন স্থগিত করবেন না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, শক্তি থাকলেও দেশের প্রাদেশিক রাজধানীগুলো তালেবান এই মুহূর্তে দখল করবে না। বিদেশি সেনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তারা এভাবেই শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকবে। সেপ্টেম্বরে সকল বিদেশি সেনা চলে গেলে গোটা দেশেরই দখল নিতে পারে তারা।
অবশ্য, আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে হটিয়ে এখনই কাবুলের দখল নেওয়ার ক্ষমতা তালেবানের রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আফগান সরকার তালেবানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তালেবান উল্টো আক্রমণ আরও বাড়িয়েছে।
আর তাই তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতা করার আবেদন করতে পারেন আশরাফ গনি।
এর আগে প্রায় ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে উভয়পক্ষ। সেখানে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। সেই অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।
অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
টিএম