মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জাতিসংঘের
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের কারণে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এই আহ্বানকে বিরল বলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করায় জান্তা সরকারের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবও পাস করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। একইসঙ্গে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর সহিংসতা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবিসি জানিয়েছে, জাতিসংঘের এই প্রস্তাবটি মিয়ানমার মানতে আইনত বাধ্য না হলেও রাজনৈতিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্র্যানার বার্গেনার সাধারণ পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা করার আমাদের দ্রুত সেটা করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সম্ভাবনা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে।’
জাতিসংঘের এই প্রস্তাবে ১১৯টি দেশ সমর্থন দিয়েছে। একমাত্র বেলারুশই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়াসহ মোট ৩৬টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।
গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।
পরে ‘নির্বাচনে অনিয়মের’ অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয় সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।
টানা আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ায় অচল হয়ে যায় দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রমও।
বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেন মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৬০ গণতন্ত্রকামীর প্রাণহানি ঘটেছে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম