ক্যাপিটল হিলে হামলায় বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প সমর্থকদের ভয়াবহ হামলা ও তাণ্ডবের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি অনেকে এটাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন।
ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, ভেনেজুয়েলা, কানাডা, জার্মানিসহ ইইউ ও ন্যাটোর মতো সংস্থা। একইসঙ্গে সংঘর্ষ থেকে বিরত ও শান্ত থাকতে ট্রাম্প সমর্থকদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে কয়েকটি দেশ।
মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডবকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন কংগ্রেসে লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ
বরিস জনসন
এদিকে মার্কিন ভোটারদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণতন্ত্রকে পদদলিত করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস।
টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, গণতন্ত্রের শত্রুরা ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার ছবিগুলো দেখে উল্লাস করবে, উপভোগ করবে। মার্কিন ভোটারদের রায় মেনে নিতে তিনি ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের অবশ্যই মার্কিন ভোটারদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে হবে বলেও জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওয়াশিংটন ডিসির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। একইসঙ্গে অবিলম্বে এ পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
আমরা উদ্বিগ্ন। ওয়াশিংটনের ঘটনার বিষয়ে প্রতিটি মিনিটের খোঁজ রাখছি আমরা।
জাস্টিন ট্রুডো
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই শক্তিশালী। একইসঙ্গে সেখানে খুব শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সকল দলকে শান্ত ও সংঘর্ষে জড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্কের পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়,‘ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনাসহ ওয়াশিংটনে বিরাজমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্ক। শান্তিপূর্ণ ভাবেই যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটের সমাধান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বিবৃতিতে বিক্ষোভ ও গোলযোগপূর্ণ স্থানগুলো থেকে দূরে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তুর্কি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
টুইটারে দেওয়া বার্তায় ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভেস লে দ্রিয়ান বলেছেন,‘ক্যাপিটল ভবনে হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর ভয়াবহ আঘাত করা হয়েছে। আমি এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। আমেরিকার মানুষের ইচ্ছা ও ভোটের রায়কে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত।’
এদিকে নিউজিল্যান্ড আমেরিকায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চায় বলে টুইট বার্তায় জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নানাইয়া মাহুতা।
ওয়াশিংটনের চলমান ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। একইসঙ্গে ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনাকে ‘খুবই বিরক্তিকর দৃশ্য’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসকে ‘গণতন্ত্রের মন্দির’ হিসেবে উল্লেখ করে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিশেল দেশটিতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি তার অফিসিয়াল টুইটার পেজে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে লোমহর্ষক দৃশ্য (দেখা গেল)। আমেরিকার গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।
জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট অ্যালবার্টো ফার্নান্দেজ।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডুক সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছেন।
চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা 'গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিবর্তনের প্রয়াস’ এর নিন্দা জানিয়েছেন।
টিএম