যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আগেও চলেছে তাণ্ডব
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে (পার্লামেন্ট) কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে চলাকালে বুধবার যে তাণ্ডব চালিয়েছেন ট্রাম্পসমর্থকরা, দেশটির ইতিহাসে তা প্রথম নয়।
কংগ্রেসের দুই কক্ষ – হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং সিনেট সদস্যদের একটি যৌথ অধিবেশন বসেছিল বুধবার। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি আসনে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের ফলাফলের বিষয়ে আলোচনা ও তার স্বীকৃতি দেওয়া কথা ছিল সেখানে। এর মাধ্যমে জো বাইডেনের বিজয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু যৌথ এই অধিবেশন চলার মধ্যেই প্রথমে বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়ে, পরে ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন ট্রাম্পসমর্থকরা।পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। সেখানে এক নারী গুলিবিদ্ধও হন। পরে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
তবে ঠিক কোন পরিস্থিতি থেকে এই গুলি চলেছে সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এব যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে গোলাগুলির ঘটনা এবারই প্রথম নয়।
১৮০০ সালের ক্যাপিটল প্রতিষ্ঠার আরও দুবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এবং তা ছাড়া একবার বড় একটি হামলার ঘটনাও ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ১০০ বছরের বেশি আগে।
১৯১৫ সালের জুলাইয়ে সিনেট রিসিপশন রুমে একটি ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটনা হয়। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জার্মান বংশোদ্ভূত একজন অধ্যাপক এই হামলার দায় স্বীকার করেন।
এই হামলায় কেউ আহত না হলেও রিসিপশন রুমের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরিক ম্যুনেতার নামের ওই অধ্যাপক পরে বলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি কাজটি করেছিলেন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে।
এ ঘট্নার কয়েক দশক পর আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ক্যাপিটলে; যাতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
১৯৫৪ সালের মার্চে হাউজ চেম্বারে দর্শনার্থীর গ্যালারি থেকে প্রায় ২শ প্রতিনিধির ওপর গুলি চালানো হয়। পুয়ের্তে রিকো দীর্ঘজীবী হোক- এই স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পাঁচজন কংগ্রেস সদস্য আহত হন।
আর ১৯৭১ সালের মার্চে ক্যাপিটল ভবনের সিনেট উইংয়ে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ আহত হননি। ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড নামে একটি যুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করে। তারা বলে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবএদ এই হামরা চালানো হয়।
১২ বছর পর ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে ক্যাপিটলের সিনেট অেশেশ আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনাতেও ক্উ আহত বা নিহত হয়েছিলেন না। গ্রেনেদা ও লেবাননে মার্কিন সেনা আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই বোমা বিস্ফোরিত করা হয়।
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি চালানো হয় ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে। রাসেল ওয়েস্টন নামে এক ব্যক্তি নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে ঢুকে পড়েন ক্যাপিটলে ও তার চালানো গুলিতে সেখানকার দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। শেষে পর্যন্ত অবশ্য ধরা পড়েন রাসেল।
ওয়াশিংটনে কারফিউ
স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে যে তাণ্ডব চলেছে, এরপর য়াশিংটনে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বুধবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার এই কারফিউ জারি করা হয়। এই ঘটনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করে জো বাইডেন বলেন, ‘ক্যাপিটল ভবনের এই ঘটনা আমেরিকার সত্যিকারের ছবি হতে পারে না। কিছু উগ্রপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষ এ কাজ করেছেন। এটা বিশৃঙ্খলা। এটা প্ররোচণা। আমাদের কাজ আইন মেনে চলা। একে-অপরকে শ্রদ্ধ করা। এটাই গণতন্ত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
এনএফ