ভোগের প্রচ্ছদে মালালা
বিখ্যাত মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ-এর প্রচ্ছদ তারকা হয়ে আসছেন নারীশিক্ষার প্রচারণা চালাতে গিয়ে তালেবানের হামলায় বেঁচে ফেরা পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে আগামী জুলাই মাসের সংখ্যায় তাকে নিয়ে ভোগ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করছে বলে জানিয়েছে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ম্যাগাজিনটির সঙ্গে ব্যক্তিজীবন, বিশ্বাস, পড়াশোনা, টুইটারে কর্মকাণ্ড এবং অ্যাপলটিভি প্লাসের সঙ্গে তার নতুন অংশীদারিত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।
সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ক্যাম্পেইনের এমা গঞ্জালেজের সঙ্গে নিজের বন্ধুত্ব নিয়েও ভোগের সঙ্গে আলাপ করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা ২৩ বছরের মালালা। তিনি বলেছেন, ‘একজন কিশোরী তার হৃদয়ে যে শক্তি বহন করে চলে আমি সে সম্পর্কে জানি।’
ভোগের জুলাই সংখ্যায় সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুকও মালালার প্রশংসা করেছেন। যেখানে মিশেল ওবামা পাকিস্তানি এই নারীশিক্ষা কর্মীকে ‘সত্যিই অসাধারণ’ আর টিম কুক ‘তার মতো আরও কেউ আছে বলে আমি মনে করি না’ মন্তব্য করেছেন।
ভোগের আলোকচিত্রী নিক নাইট প্রচ্ছদকন্যা মালালা ইউসুফজাইয়ের ছবি তুলেছেন। প্রচ্ছদে পাকিস্তানি এই মানবাধিকার কর্মীকে ফ্যাশন ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনির নকশা করা উজ্জ্বল লাল পোশাক ও মাথায় ওড়না পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়।
ম্যাগাজিনের ভেতরের ছবিতে মালালা পরেছেন উরুগুয়ের ডিজাইনার গ্যাব্রিয়েলা হার্স্টের নকশা করা আরেকটি লাল রঙয়ের পোশাক এবং লিনেন ট্রাউজার। এই দুই পোশাকের সঙ্গে মাথায় জড়িয়েছেন নীল ওড়না।
মামলা ইউসুফজাই মাথায় জড়ানো ওড়নাকে পাকিস্তানের সুন্নি মুসলিম নৃ-গোষ্ঠী ‘পশতুন’ সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেছেন স্বাক্ষাৎকারে। অক্সফোর্ড পড়ুয়া এই পাকিস্তানি নারীশিক্ষা কর্মী পশুতুন নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য।
তিনি বলেছেন, মুসলিম অথবা পশতুন কিংবা পাকিস্তানি তরুণীরা— আমরা যখন নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরি তখন আমাদের ‘নিপীড়িত, কণ্ঠস্বরহীন অথবা পিতৃতন্ত্রের অধীন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমি সবাইকে বলতে চাই, প্রত্যেকেই তার নিজের সংস্কৃতির মধ্যে থেকেও নিজেদের কণ্ঠস্বর হতে পারে। সাংস্কৃতিক সমতাও তৈরি করতে পারে।
ভোগ ম্যাগাজিনের নতুন প্রচ্ছদে জায়গা পাওয়ায় ‘উচ্ছ্বসিত এবং সম্মানিত’ বলে ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন মালালা। লিখেছেন, আমি আশা করছি, প্রত্যেক কিশোরী যারা এই প্রচ্ছদ দেখবে তারা জানবে যে— প্রত্যেকেই এই বিশ্ব বদলাতে পারে।
নারীশিক্ষা ও মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন মালালা বিশ্বমঞ্চে আলোচনায় আসেন ২০১২ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে। নারীশিক্ষার পক্ষে কথা বলায় সেই সময় তালেবান জঙ্গিদের নিশানা হয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের পশতুন অধ্যুষিত সোয়াত উপত্যকায় তালেবান জঙ্গিরা স্কুল থেকে ফেরার পথে কিশোরী মালালার মাথায় গুলি চালায়।
গুরুতর আহত মালালাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্রিটেনের বার্মিংহামের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপরই তার অলাভজনক সংস্থা মালালা ফান্ড গঠন করেন। গত বছর ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, দর্শন এবং অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেছেন ইউসুফজাই।
সম্প্রতি এক্সট্রাকারিকুলার নামে নিজস্ব একটি প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন তিনি। কিশোরী শিক্ষা এবং নারী অধিকারের পাশাপাশি কমেডি, অ্যানিমেশন ও শিশুদের নিয়ে অ্যাপলটিভি প্ল্যাসের সঙ্গে যৌথভাবে ডক্যুমেন্টারি বানাবে তার এই প্রতিষ্ঠান।
সূত্র: সিএনএন।
এসএস