এক সপ্তাহে প্রায় ৯ হাজার আফগানকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান

গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনে কমপক্ষে ৮ হাজার ৯০৬ জন আফগানকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নোটিশে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানে আশ্রিত আফগানদের মধ্যে যাদের বসবাসের পক্ষে বৈধ নথি নেই অথবা আফগান সিটিজেন কার্ড নেই, তাদেরকে অবশ্য ৩১ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগ করতে হবে।
যারা এই সময়সীমার মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগে ব্যর্থ হবেন, তাদেরকে সরকারি উদ্যোগে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল নোটিশে।
সরকারি হিসেব অনুসারে পাকিস্তানে বসবাস করছেন প্রায় ২৫ লাখ আফগান অভিবাসী। এদের মধ্যে ১৫ লাখ অভিবাসীর বসবাসের পক্ষে বৈধ নথি-পত্র রয়েছে, বাকিরা নথিবিহীন। বাস্তবে এই সংখ্যা অবশ্য আরও অনেক বেশি। এই আফগানদের একটি বড় অংশ পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন আফগানিস্তানে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযানে সময়। ১৯৭৯ সাল থেকে ’৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়েছিল রুশ বাহিনী।
গত ৩৫-৩৬ বছরে এই অভিবাসীদের কারণে পাকিস্তানে তেমন কোনো সমস্যা না ঘটলেও ২০২২ সাল থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই বছর থেকে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা, বোমা হামলা ও আত্মঘাতী বোমা হামলার উল্লম্ফন ঘটে এবং গত প্রায় আড়াই বছরে কয়েক হাজার সামরিক ও বেসামরিক মানুষ এসব হামলায় নিহত ও আহত হয়েছেন।
এসব হামলার অধিকাংশই ঘটিয়েছে আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। পাকিস্তানের অভিযোগ, টিটিপি তার সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য আশ্রিত এই তালেবানদের গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করছে।
২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে আফগান শরণার্থীদের নিজ দেশে পাঠানোর ব্যাপরে আলোচনা শুরু হয় পাকিস্তানের সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে। ২০২৪ সালে কয়েক হাজার নথিবিহীন আফগান শরণার্থীকে ফেরতও পাঠিয়েছে পাকিস্তান। সেই ধারাবাহিকতাতেই এই ৮ হাজার ৯০৬ জন আফগানকে নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
এদিকে পাকিস্তানের এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে আফগানিস্তান। দেশটির অভিবাসন ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মোতালিব হাক্কানি রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “কোনো সন্দেহ নেই যে এমন একতরফাভাবে জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে আফগান অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক, ইসলামিক এবং প্রতিবেশীসুলভ নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি।”
“যেহেতু এটি দুই দেশের মধ্যকার ব্যাপার, তাই পাকিস্তানের উচিত ছিল দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে এই আফগান অভিবাসীদের তাদের জন্মভূমিতে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া।”
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ