আইসিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা হাঙ্গেরির

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হাঙ্গেরির সরকার। গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা উপক্ষো করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশটিতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার পরপরই এই ঘোষণা দেয় হাঙ্গেরি। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এই পরোয়ানা জারির একদিন পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে বুদাপেস্ট সফরের আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে চলা এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। যদিও ইসরায়েল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইহুদি বিদ্বেষ থেকে করা হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা একটি দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে সব ধরনের বৈধতা হারিয়েছে আইসিসি।
আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তাত্ত্বিকভাবে আদালতের কাছ থেকে পাওয়া পরোয়ানা সাপেক্ষে যে কাউকে গ্রেপ্তার এবং হস্তান্তর করতে বাধ্য হাঙ্গেরি। কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন, আইসিসির রায়কে ‘‘দুঃসাহসী, ছদ্মবেশী এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’’ বলে মনে করে হাঙ্গেরি। আইসিসির এই রায়ের প্রতি কোনও ধরনের সম্মান দেখাবে না তারা।
১৯৯৯ সালে আইসিসির প্রতিষ্ঠাকালীন নথিতে স্বাক্ষর এবং ২০০১ সালে অনুমোদন করে হাঙ্গেরি। তবে আইনটি ঘোষণা করা হয়নি।
ভিক্টর অরবানের চিফ অব স্টাফ জার্জলি গুলিয়াস গত নভেম্বরে বলেছিলেন, হাঙ্গেরি আইসিসির রোম সংবিধির অনুমোদন দিলেও সেটিকে হাঙ্গেরিয়ান আইনের অংশ করা হয়নি। যার অর্থ হাঙ্গেরিতে আদালতের কোনও পদক্ষেপের বাস্তবায়ন করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার হাঙ্গেরি রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা এমটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গুলিয়াস বলেছেন, সরকার আজ আরও পরের দিক থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতের প্রসিকিউটর করিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর আইসিসি থেকে হাঙ্গেরির প্রস্থানের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন অরবান। সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে অরবান বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় হাঙ্গেরির পক্ষে আমরা কী করছি তা পর্যালোচনা করার সময় এসেছে।
আইসিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ। বছরব্যাপী প্রক্রিয়া শুরু করার এই সংক্রান্ত একটি বিল হাঙ্গেরির সংসদে পাশ করতে হবে। তবে দেশটির সংসদে ভিক্টর অরবানের ফাইডেসজ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আইনটি পাশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদরদপ্তর নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত। নেদারল্যান্ডস বলছে, প্রত্যাহার সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত হাঙ্গেরিকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাস্পার ভেলডক্যাম্প ব্রাসেলসে ন্যাটো বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, আইসিসি থেকে প্রত্যাহারের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় এক বছর সময়ের দরকার হয়। এই সময়ে হাঙ্গেরিকে আদালতের সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস