ইরানের পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘর্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’

পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের। এমনকি পরমাণু চুক্তি না করলে ইরানে হামলার হুমকিও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে চাপ সত্ত্বেও পরমাণু ইস্যুতে সরাসরি কোনও ধরনের আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে তেহরান।
এমন অবস্থায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘর্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ বলে মন্তব্য করেছে ফ্রান্স। তেহরানের সাথে সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ সংকীর্ণ বলেও জানিয়েছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
মংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সভাপতিত্বে ইরান বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারোট বলেন, তেহরানের সাথে সংকটের কূটনৈকিক সমাধানের সুযোগ সংকীর্ণ।
ইউরোপীয় শক্তিগুলো চলতি বছরের মাঝামাঝি এবং ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কূটনৈতিক উপায় তৈরি করতে চাইছে। মূলত এই সময়সীমায় বিশ্বশক্তির সাথে ২০১৫ সালের ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তেহরান অবশ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসছে। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি জোর দিয়ে বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারোট দেশটির পার্লামেন্টে বলেন, “সুযোগের জানালা সংকীর্ণ। এই (২০১৫) চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আমাদের হাতে মাত্র কয়েক মাস সময় আছে। ব্যর্থতার ক্ষেত্রে, সামরিক সংঘাত প্রায় অনিবার্য বলে মনে হচ্ছে।”
ব্যারোট আরও বলেন, “আমাদের আস্থা এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রয়েছে। ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া হবে না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফ্রান্সের অগ্রাধিকার হলো— ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার জন্য একটি “যাচাইযোগ্য এবং টেকসই” চুক্তি নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য ইরানের সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া।
কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন
এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মূলত ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। এমনকি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরানকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।
মূলত জেসিপিওএ চুক্তির বিনিময়ে ইরানকে পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি প্রদান করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং এরপর তেহরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে ওয়াশিংটন।
তারপর থেকে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রে চুক্তির সীমা অতিক্রম করে উচ্চ স্তরের বিশুদ্ধতা মজুদ তৈরি করেছে, যা পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো বেসামরিক জ্বালানি কর্মসূচির জন্য যতটা ন্যায্য বলে মনে করে তার চেয়ে অনেক বেশি এবং পারমাণবিক ওয়ারহেডের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের কাছাকাছি।
এমন অবস্থায় ইউরোপীয় শক্তিগুলো ইরানকে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা গত সপ্তাহে ইরানের সাথে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা করেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন প্রাথমিকভাবে তেহরানের ওপর “সর্বোচ্চ চাপ” সৃষ্টির ওপরই মনোনিবেশ করেছে।
এছাড়া ট্রাম্প নিজেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে অবিলম্বে আলোচনায় যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। আর সর্বশেষ গত রোববার ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনও চুক্তিতে না পৌঁছালে বোমা হামলা এবং সেকেন্ডারি শুল্কের হুমকি দিয়েছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খামেনি।
টিএম