দেশব্যাপী ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন সিরিয়া

দেশব্যাপী ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। জাতীয় গ্রিডের বেশ কয়েকটি স্থানে ত্রুটির কারণে এই পরিস্থিতির মুখে পড়েছে দেশটি।
অবশ্য বিপর্যয় কাটিয়ে দেশটির কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন পুনরায় শুরু হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। বুধবার (২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, জাতীয় গ্রিডের বেশ কয়েকটি স্থানে ত্রুটির কারণে সিরিয়ায় দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে বলে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। মুখপাত্র বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে তা সমাধান করছে কারিগরি দলগুলো।
কোনও আক্রমণের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা জেনারেল এস্টাবলিশমেন্ট ফর ইলেক্ট্রিসিটি ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন’র পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ আবু দাই রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানাকে বলেছেন: “বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কারিগরি ত্রুটির ফলে সিরিয়ায় দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সমস্যাটি মেরামত এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে।”
হোমস, হামা এবং তারতুস প্রদেশে বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে এবং ধীরে ধীরে বাকি প্রদেশগুলোতেও ফিরে আসবে বলে সংব্দ সংস্থা সানা পরে মহাপরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, সিরিয়া আগে থেকেই তীব্র বিদ্যুৎ ঘাটতির সম্মুখীন। বেশিরভাগ এলাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ মাত্র দুই বা তিন ঘণ্টা পাওয়া যায়।
মূলত দামেস্ক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তার প্রয়োজনীয় তেলের বেশিরভাগই ইরানের কাছ থেকে পেত, কিন্তু হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গত বছরের ডিসেম্বরে আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে তেহরানের মিত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর থেকে সেই সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দামেস্ক আরও জানিয়েছে, জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য তারা তুরস্ক এবং কাতার থেকে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জাহাজ পাবে।
আরও পড়ুন
মূলত লাখ লাখ সিরিয়ান এখনও সৌর প্যানেল স্থাপন বা ব্যক্তিগত জেনারেটর পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় মোটা অংকের অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন না। ১৪ বছরের সংঘাতের ফলে দেশের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে।
এছাড়া সিরিয়ার অর্থনীতিকে আবারও টেকসই করার জন্য তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে রাজি করাতেও কার্যত হিমশিম খাচ্ছে। একইসঙ্গে দেশটি ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে যার ফলে মৌলিক অবকাঠামোরও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।
আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়াজুড়ে শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে এবং অধিকৃত গোলান মালভূমির বাফার জোনে সেনা মোতায়েন করেছে। আল-আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালীনও ইসরায়েল নিয়মিতভাবে সিরিয়ায় আক্রমণ চালিয়েছে। সেসময় ইরানি এবং হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বোমাবর্ষণের দাবিও করত ইসরায়েল।
টিএম