ভূমিকম্প বিপর্যয় ডেকে এনেছে, সাহায্যের প্রয়োজন আমাদের

চারিদিক থেকে চিৎকার শুনতে পাচ্ছি- আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান... অসহায় লাগছে, বলছিলেন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের এক বাসিন্দা। শুক্রবারের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন এখনও সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেখানে।
মিয়ানমারে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না এখনও। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে দেশটিতে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত মানুষের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে অবস্থিত মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়তেই দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে পড়া ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়া মানুষের খোঁজে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে অনেক জায়গায়।
উদ্ধারকাজে যুক্ত নাগরিক দলের ওই সদস্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে কতটা অসহায় বোধ করছেন তারা। ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া মানুষের আর্তচিৎকার ভেসে আসছে। খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছিলেন তিনি।
মান্দালয়ের আরেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, একটা হোটেল ভেঙে পড়েছে যার নিচে আটকে রয়েছেন অনেকে। পেশায় শিক্ষিকা ওই নারী বলছিলেন, আমি মায়েদের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। তাদের সন্তান ভেঙে পড়া ওই হোটেলের স্তূপের নিচে আটকে রয়েছে। এই দৃশ্য দেখা যায় না।
‘‘এই ভূমিকম্প বিপর্যয় ডেকে এনেছে। আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’’
মিয়ানমারের বাসিন্দাদের অনেকের মধ্যেই আতঙ্কের ছাপ রয়েছে এখনও। শুক্রবার দুপুরে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশটি। এর তীব্রতা এতটাই ছিল যার প্রভাব দেখা গেছে থাইল্যান্ড ও চীনেও।
শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি আফটার শকও অনুভূত হয়েছে মিয়ানমারে।
প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পরে দ্বিতীয়টির মাত্রা ছিল ছয় দশমিক চার। এরপর শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত একাধিকবার মৃদু কম্পন অনুভব করা গেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মান্দালয়ের পাশাপাশি মিয়ানমারের একাধিক অঞ্চল এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে মান্দালয়, সাগাইং, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডেও এই ভূমিকম্পের প্রভাবে বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০ তলা একটি ভবন মুহূর্তেই মাটিতে মিশে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অডিট জেনারেলের নতুন কার্যালয় হিসেবে নির্মাণাধীন এই ভবনটির অন্তত ১০০ জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ আছেন। শনিবার দুপর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবনটির আরও নিচের দিকে দেবে যাওয়া এখনও থামেনি। উদ্ধার অভিযান চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার রাতেও ওই ভবনের নিচে আটকে থাকা একাধিক মানুষের বেঁচে থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও, এখন তাদের অনেকের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাড়া মিলছে না। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা হাল ছাড়েননি।
• ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন অনেকে
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অনেকেই এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মান্দালয়ে ভেঙে পড়া একটা বহুতল ভবনের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের কাজ চলছে শুক্রবার থেকে। উদ্ধারকারী দলের এক কর্মী জানিয়েছেন, রাতভর চলা এই অভিযানে ওই ভবন থেকে ৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা তাদের।
‘‘আমরা এখনও বাকিদের বের করার চেষ্টা করছি। তবে বড় মেশিন দরকার। আটকে থাকা ব্যক্তিরা এখনও চিৎকার করছেন, আমরা তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু তারা ঠিক কোথায় আছেন, তা বুঝতে পারছি না,’’ বিবিসিকে বলেছেন ওই উদ্ধারকর্মী।
• ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এই শহর
গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আহত প্রায় সাড়ে তিন হাজার। খোঁজ মিলছে না অনেকের।
তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে ঠিক কী ঘটছে তার স্পষ্ট চিত্র মেলা সহজ নয়। ২০২১ সালে সামরিক সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাবে বিদেশি সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশের অনুমতি খুব কমই দেওয়া হয়।
বিবিসি ও অন্যান্য গণমাধ্যমের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন তাদের অনেকেই নিরাপত্তার কারণে নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি। এক উদ্ধারকর্মী জানান, শুক্রবার যখন ভূমিকম্প আঘাত হানে, সেই সময় আতঙ্কে লোকজন রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। চিৎকার করছিলেন, কান্নাকাটি করছিলেন। শহরের জেনারেল হাসপাতাল রোগীতে ভরে গেছে।
মিয়ানমারের এই ভূমিকম্পে মান্দালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, এ যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত একটা শহর। কেউ কেউ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। এটা (ভূমিকম্প) খুবই মারাত্মক আকারের ছিল। এত তীব্র কম্পন আমি আগে কখনও অনুভব করিনি।
• জানি ওদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই
মান্দালয়ের এক বাসিন্দা বিবিসি বার্মিজকে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। ভূমিকম্প আঘাত হানার সেই মুহূর্তের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমি বাথরুমে ছিলাম। শুরুতে মাটি ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে। প্রায় দশ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল এটা। তারপরই চোখের সামনে আমাদের পুরো বাড়ি ভেঙে পড়ল।
‘‘শ্বাসও নিতে পারছিলাম না। পরে কোনোমতে সাহায্যের জন্য চিৎকার করি। আমার বাবা, কাকা এবং আরও পাঁচ-ছয়জন মিলে আমাকে উদ্ধার করতে আসে।’’
এরই মাঝে দ্বিতীয়বার কম্পন অনুভূত হয়।
ওই নারী বলেন, আমাকে তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আরেকবার ভূমিকম্প আঘাত হানে। যে ভবনের দিকে আমরা দৌড়াচ্ছিলাম, সেটাও ধসে পড়ে। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। এতটাই আঘাত পেয়েছিলাম যে ব্যথার কারণে হাঁটতে পারছিলাম না। কোনোমতে বাবা আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন।
ভূমিকম্পে স্বজন হারিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, পরিবারের সাতজনের মধ্যে আমার দুই চাচিকে উদ্ধার করা গেছে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে, অন্যজন হাসপাতালে। আমার দাদি এবং চাচাদের খোঁজ মেলেনি। তারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। জানি ওদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু আমি তা মেনে নিতে পারছি না। নিমেষে আমার চোখের সামনে সব তছনছ হয়ে গেল।
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ৯০ বছরের পুরোনো এক সেতু ভেঙে পড়েছে। ইয়াঙ্গুন থেকে মান্দালয় সংযোগকারী সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও খবর।
মান্দালয়ের একজন বাসিন্দা ভূমিকম্পের পরের অবস্থা সম্পর্কে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলেন, এই পরিস্থিতি দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার গ্রামের সব প্যাগোডা, মন্দির, এমনকি এগুলোর সিঁড়িসহ সবকিছু ভেঙে পড়েছে। আমরা সবকিছু হারিয়েছি। এই ধরনের দুঃখজনক পরিস্থিতি দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। এখন পর্যন্ত, আমি এরকম কোনো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাইনি। এটাই প্রথম। আমি খুবই বিমর্ষ।
ইয়াঙ্গুনের এক বাসিন্দা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ ডে অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, তীব্র কম্পন অনুভব করেছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেছেন, বেশ তীব্র ছিল ওই কম্পন। তিন-চার মিনিট স্থায়ী ছিল। পরে বন্ধুদের কাছ থেকে শুনলাম শুধু ইয়াঙ্গুনে নয়, মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মান্দালয়ের পরই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিডোতে। উদ্ধারকাজে যুক্ত এক ব্যক্তি বিবিসিকে জানিয়েছেন, চিৎকার শুনে তারা একটা ভবনের দিকে ছুটে গেলেও তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পরে তারা অন্য একটা বিধ্বস্ত দোকানের ধ্বংসস্তূপ থেকে দুইজনকে উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছিল, অন্যজন গুরুতর আহত ছিলেন। দোকানের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি উদ্ধারকারী দলকে জানিয়েছিলেন, সেখানে ১৭ জন ব্যক্তি আটকা রয়েছেন।
আমরা শুধু তাদেরই উদ্ধার করতে পারছি যাদের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, বলেন ওই ব্যক্তি।
নেপিডো জেনারেল হাসপাতালের বাইরে রোগীদের চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। মান্দালয় বিমান বন্দরে একটা অস্থায়ী হাসপাতাল এবং রিলিফ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে জান্তা সরকার। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত-সহ একাধিক দেশ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড আর্থিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে। ভারত সরকার প্রথম দফায় সামরিক বিমানে করে খাবার, রান্নার সরঞ্জাম, কম্বল, স্লিপিং ব্যাগ, সোলার ল্যাম্প-সহ বিভিন্ন সামগ্রী পাঠিয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভির তথ্য অনুযায়ী, বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য বিশেষ একটা টিমকে মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছে।
• মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
জরুরি অবস্থা জারি করা কিছু এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বেসামরিক মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে সাগাইং অঞ্চলের চ্যাং-ইউ শহরে বিমান হামলা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্য এবং কারেনিতেও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। দেশটিতে জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তকারী জাতিসংঘ সংস্থা।
গত বছরের শেষের দিকে বিবিসির একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর হাতে এখন দেশের এক চতুর্থাংশেরও কম নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। রাশিয়ান এবং চীনের তৈরি ফাইটার জেট ব্যবহার করে সেনাবাহিনী দেশজুড়ে বিধ্বংসী বিমান হামলা চালাচ্ছে। ব্যাংককেও ধ্বংসস্তূপ, ধীরে চলছে উদ্ধারকাজ থাইল্যান্ডেও এই ভূমিকম্পের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ব্যাংককে নির্মাণাধীণ ৩০ তলা যে ভবনটি ধসে পড়েছে সেখানে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে শুক্রবার থেকেই।
থাই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে ছোট সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু আটকে পড়া ব্যক্তিরা ঠিক কোথায় রয়েছেন তা আন্দাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, তাই বড় যন্ত্র ব্যবহার করলে তাদের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
দীর্ঘক্ষণ ধরে খাবার ও পানি না থাকায় আটকে থাকা ব্যক্তিদের কষ্ট আরও বেড়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১৫ জনকে জীবিত অবস্থায় শনাক্ত করতে পেরেছেন।
এক উদ্ধারকর্মী বলেছেন, গত রাতে বেশ কয়েকজন জীবিত রয়েছেন এমন ইঙ্গিত পেয়েছিলাম আমরা। তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে এখন আর তেমন সাড়া পাচ্ছি না। তবে আমরা এখনই হাল ছাড়ছি না।
সেখানকার এক উদ্ধারকর্মী বিবিসিকে বলেন, এর আগেও আমরা ভেঙে পড়া বেশ কয়েকটা ভবনে উদ্ধারকাজ চালিয়েছি। কিন্তু এটা আমাদের দেখা সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা। যারা চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকছেন তাদের শনাক্ত করতে বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে পৌঁছানো কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
• যে অবস্থায় থাকুক না কেন একবার দেখতে দিন
ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েক মিটারের দূরত্বে এক নারী অঝোরে কেঁদে চলেছেন। তার স্বামী ওই ভবনের নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করছিলেন। বয়স ৪৫-এর ওই শ্রমিকের এখনও খোঁজ মেলেনি। স্বামীর খবর পেতে মরিয়া তার স্ত্রী নারুমল।
নিজের স্বামীকে একবার দেখার জন্য অনুরোধ করে চলেছেন তিনি। তাকে বলতে শোনা যায়, ও যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন একবার অন্তত দেখতে দিন আমাকে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তার স্বামী। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যাংককে কমপক্ষে দুই হাজার বহুতল ভবন কোনো না কোনোভাবে এই ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর মিলেছে। কোথাও সামান্য ফাটল ধরেছে, কোথাওবা ক্ষতির পরিমাণ বেশি। বিশেষজ্ঞদের ওই ভবনগুলো পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার ভূমিকম্পের সময় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ব্যাংককের একাধিক হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাইরে আনা হয়। কিং চুলালনকর্ণ মেমোরিয়াল হসপিটাল এবং বিএনএইচ হসপিটালের রোগীদের হুইল চেয়ার বা স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে হয়েছে চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের। সেই সময় ব্যাংককের রাস্তাতেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক নারী।
এসএস