ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পরিকল্পনার আলোচনা ফাঁস

ইয়েমেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গোপন আলোচনা ফাঁস হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি দেশটির হুথি গোষ্ঠীর ওপর হামলার বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপে এক সাংবাদিককে যুক্ত করেন।
বিজ্ঞাপন
আর সেখান থেকেই এটি ফাঁস হয়। এছাড়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক’র এক সাংবাদিকের সাথে ভুল করে ইয়েমেন যুদ্ধ পরিকল্পনা শেয়ার করার বিষয়টি স্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। আটলান্টিকে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হোয়াইট হাউস ভুল স্বীকার করে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
মূলত গত কয়েক দিন ধরেই ইয়েমেনে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেখানে যে হামলা চালানো হবে, তা আগেই জেনে গিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি ভুলের কারণেই ওই কথা আগেই জেনে যান ওই সাংবাদিক।
কারণ ওই গ্রুপেরই সদস্য ছিলেন ‘দি আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনের এডিটর-ইন-চিফ জেফরি গোল্ডবার্গ। ওই ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে সেই কথা জানানোর পরে নিজেদের ভুলের কথা স্বীকার করে নেয় হোয়াইট হাউস। এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথিদের ওপর আমেরিকার আক্রমণের কিছুক্ষণ আগে একটি বার্তা ভুল করে একজন সাংবাদিকসহ অন্যদের কাছে যুদ্ধ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন। এই ঘটনায় ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা দ্রুত এই ভুলের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন এবং আইন লঙ্ঘন যা কংগ্রেস কর্তৃক তদন্ত করা উচিত।
সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হওয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। এ ধরনের তথ্য যদি শত্রুদের হাতে পড়ে, তাহলে তা কেবল জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে না, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এনক্রিপ্টেড চ্যাট অ্যাপ ‘সিগনাল’-এ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েমেনে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি ‘দি আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনের জেফরি গোল্ডবার্গ জানান, ভুলবশত তাকে এই গোপন গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত করেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ।
গত ১৫ মার্চ ইয়েমেনে হামলা শুরু হয়। হামলা শুরুর প্রায় ২ ঘণ্টা আগে সেই সম্পর্কিত সব তথ্য ওই গ্রুপে দেওয়া হয়েছিল। কখন হামলা হবে, কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোথায় হামলা হবে সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয় সেখানে।
ম্যাগাজিনের এডিটর-ইন-চিফ আরও জানিয়েছেন, ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্য করে হামলার বিষয়টি আগেই জেনেছিলেন তিনি। কারণ, যুদ্ধের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি তথ্য তাকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। যুদ্ধের যাবতীয় খুঁটিনাটি সম্পর্কে আগাম তথ্য তিনি পেয়েছিলেন।
গোল্ডবার্গ আরও জানিয়েছেন, ওই চ্যাট গ্রুপে আছেন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, সিআইএ-র ডিরেক্টর জন র্যাটক্লিফ, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর তুলসী গ্যাবার্ড-সহ জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ। কীভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত না থাকা এক ব্যক্তির নাম্বার ওই গ্রুপে যুক্ত হয়েছে তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছেন, “এই মেসেজ থ্রেডটি আসল বলেই মনে হচ্ছে”।
আরও পড়ুন
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ভুল নিয়ে সরব হয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা। এই বিষয়টিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন তারা। তাদের মতে, এই আইন লঙ্ঘন কংগ্রেস কর্তৃক তদন্ত করা উচিত।
সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট মার্ক ওয়ার্নার বলেন, “এই প্রশাসন গোপন তথ্য ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বহীন আচরণ করছে, যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
এছাড়া এই ভুলের জন্য রিপাবলিকান নেতারাও সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসম্যান ডন বেকন বলেন, “এ ধরনের তথ্য অনিরাপদ প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা উচিত হয়নি। রাশিয়া ও চীন অবশ্যই এসব মনিটর করছে।”
টিএম