যুক্তরাজ্যে আপিলের অপেক্ষায় অন্তত ৪২ হাজার আশ্রয়প্রার্থী

যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া অন্তত ৪২ হাজার আশ্রয়প্রার্থী এখন আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছেন। ব্রিটিশ বিচার মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
বেসরকারি সংস্থা শরণার্থী কাউন্সিল জানিয়েছে, দুই বছরে এই সংখ্যা পাঁচ গুণ অর্থাৎ পাঁচশ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে, অন্তত ৪০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে এখনও আবাসিক হোটেলে রাখতে হচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকারকে। এতে দেশটির করদাতাদের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পাওয়া আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তারা সবাই আপিলের জন্য আদালতের দিকেই তাকিয়ে আছেন। সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখা কমিয়ে আবাসন খাতে ‘অগ্রহণযোগ্য উচ্চ ব্যয়’ কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সরকার।
বিজ্ঞাপন
শরণার্থী কাউন্সিল বলছে, আগের রক্ষণশীল সরকারের করা কঠোর আইনের কারণে এখন বেশি সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের পক্ষে নিজেকে প্রকৃত শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্রিটেনের সরকার জাতীয়তা ও সীমান্ত আইন প্রণয়নের পর গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি ১০ জন আফগানের মধ্যে মাত্র চারজনকে সুরক্ষা অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর আগে আশ্রয় চাওয়া প্রায় সব আফগান নাগরিকের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
যারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছর ধরে হোটেলে রাখা আশ্রয়প্রার্থী এবং ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ছোট নৌকায় আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে আফগানিস্তানের নাগরিকের সংখ্যাই বেশি।
এমন বাস্তবতায়, আরও যৌক্তিক ও ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় নিশ্চিত করে দেশটির জন্য অবদান রাখার কাজে যুক্ত করা যাবে। আর যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার থাকবে না, তাদের মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানো যাবে।’’
দাতব্য সংস্থাটি বলেছে, আপিলের জন্য যারা আবেদন করেছেন, তাদের জন্য এখনও আবাসন প্রয়োজন। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চলতি বছর হোটেল ব্যয় ১৫০ কোটি পাউন্ড হতে পারে।
সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আশ্রয় ব্যবস্থাপনা কৌশলটি আসলে উপযুক্ত নয়। তাই আশ্রয় প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করছি এবং আশ্রয় ব্যবস্থায় তৈরি হওয়া ব্যাকলগ দূর করতে জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। এর মাধ্যমে আগামী দুই বছরে অন্তত চারশ কোটি পাউন্ড অর্থ সাশ্রয় হবে।’’
ব্রিটিশ হোম অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আশ্রয় দাবি সহজতর এবং এ সংক্রান্ত কাজের গতি বাড়াতে ইমিগ্রেশন ও অ্যাসাইলাম চেম্বারে আরও অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে।’’
ব্রিটিশ বিচার মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের শেষে আদালতে ৪১ হাজার ৯৮৭টি আশ্রয় আবেদন জমা ছিল। ২০২৩ সালের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল মাত্র সাত হাজার ১৭৩। রিফিউজি কাউন্সিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত বছর প্রাথমিক আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের পর আপিলের সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৭১ শতাংশ বেশি। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
এসএস