ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলা হয়নি, দাবি জেলেনস্কির

রাশিয়ার কুরস্কে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার দাবি, রুশ ওই অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনারা এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে রাশিয়া “সম্পূর্ণভাবে ঘেরাও” করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার (১৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনারা এখনও রাশিয়ান এবং উত্তর কোরিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তবে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব সুমি অঞ্চলে ইউক্রেনীয বাহিনী সম্ভাব্য নতুন আক্রমণের মুখোমুখি হতে পারে বলে শনিবার জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
গত বছরের আগস্টে ব্যাপক আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশের সময় ইউক্রেনীয় সেনারা কুরস্ক অঞ্চলের “দখল” নিয়েছিল। তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া পশ্চিম রাশিয়ান অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনাদের বিতাড়িত করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে “সম্পূর্ণভাবে ঘেরাও” করে ফেলেছে রাশিয়া।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) দূরে সুদজার কাছে আরও দুটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। আর সুদজা শহরটি গত বৃহস্পতিবার রুশ বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে মস্কো।
রাশিয়ার জরুরি অবস্থা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সুদজার আশপাশের এলাকা থেকে ৩০০ জনেরও বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর আলেকজান্ডার খিনশটাইন বলেছেন, পুনরুদ্ধারকৃত এলাকাগুলোতে কতজন বাসিন্দা তাদের বসতিতে ফিরে যেতে চান তা নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তার।
এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার শীর্ষ জেনারেলের ব্রিফিংয়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, কিয়েভের সৈন্যদের কুরস্কে ঘেরাও করা হয়নি, তবে মস্কো পৃথক হামলার জন্য কাছাকাছি এলাকায় বাহিনী জড়ো করছে।
তিনি বলেন, “এটি আমাদের সুমি অঞ্চলে আক্রমণ করার অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয়। আমরা এটি সম্পর্কে সচেতন এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করব। আমি চাই (আমাদের) সমস্ত অংশীদাররা পুতিন কী পরিকল্পনা করছেন, তিনি কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তিনি কী উপেক্ষা করবেন তা ঠিকভাবে বুঝতে পারুক।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি নীতিগতভাবে ইউক্রেনের সাথে ট্রাম্পের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে সমর্থন করেন, তবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত স্থির না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এরপর শনিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, রাশিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি হলে ইউরোপীয় দেশগুলো এবং পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তুতি জোরদার করছে। প্রতিরক্ষা প্রধানরা আগামী সপ্তাহে “জোরালো পরিকল্পনা” তৈরি করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আরও বলেন, “রাশিয়ান বাহিনীর এই গঠন ইঙ্গিত দেয় যে— মস্কো কূটনীতি উপেক্ষা করেই যেতে চায়। এটা স্পষ্ট যে— রাশিয়াই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে।”
এছাড়া বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, কৌশলগত পূর্ব ইউক্রেনীয় শহর পোকরোভস্কের কাছে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সফলভাবে একটি নতুন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
মূলত পশ্চিমা মিত্রদের থেকে নিজেকে মুক্ত করতে কিয়েভ তার অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা শিল্পকে সম্প্রসারণ করতে চাইছে। তিন বছর আগে যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমা মিত্ররা গুরুত্বপূর্ণ কামান, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং দূরপাল্লায় আঘাতের সক্ষমতা ইউক্রেনকে প্রদান করেছে।
আরও পড়ুন
জেলেনস্কি বলছেন, ইউক্রেনের নতুন “লং নেপচুন” ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১০০০ কিলোমিটার (৬২১ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ সামরিক বাহিনী সুদজার ঠিক বাইরে রুবানশিনা এবং জাওলেশেঙ্কা গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। মূলত রাশিয়া গত বছরের আগস্টে কুরস্কে অবস্থান নেওয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য অভিযান ত্বরান্বিত করেছে। সেসময় ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ ওই অঞ্চলে প্রায় ১০০টি বসতি দখল করেছিল।
টিএম