ইয়াসের তাণ্ডবে ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গে নিহত ৫
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে মূল আঘাতের আগেই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই দুই প্রদেশে এই মুহূর্তে ভারী বর্ষণ এবং তীব্র বাতাস বইছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল রূপে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওডিশায় মূল আঘাত হানবে আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্মুখভাগ ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে ওডিশায়। এতে এই প্রদেশে অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ওডিশার কিওনঝর জেলার পঞ্চপল্লী গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ চাপা পড়ে একজন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তা সরোজ কুমার দত্ত আলজাজিরাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে ইয়াসের প্রাথমিক আঘাতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। একই প্রদেশের ময়ুরভাঞ্জ জেলার জগন্নাথ খুন্তা গ্রামের একটি পুকুর থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা।
— Sagnik Chowdhury (@IdleSagnik) May 26, 2021
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) ইয়াসকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে। দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে, তীব্র বাতাস এবং ভারী বর্ষণ হচ্ছে ওডিশায়। ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত বাড়িঘর।
আইএমডির মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মুখপাত্র বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবের প্রক্রিয়া সকাল ৯টার দিকে শুরু হয়েছে। এটি আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে অব্যাহত থাকবে। বিকেলের দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে ঝাড়খণ্ড রাজ্য অতিবাহিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায়ই প্রবল থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে ঘূর্ণিঝড় তওকতের আঘাতে ১৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (দুপুর ২টা) অন্তত তিনজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ইয়াসের প্রভাবে ওডিশা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে ভারী বর্ষণ এবং তীব্র বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের আগেই এক টর্নেডোতে তিনজন নিহত হয়েছেন।
Odisha is mostly affected by cyclone every year. Try to appreciate the way situation been tackled by Naveen Babu. So Discuss about Odisha not West Bengal. @ZeeNews #CycloneYaasUPDATE #cycloneyash #zeenews https://t.co/JMwa9UvCd3
— arjeeta_samanta (@arjeeta_samanta) May 26, 2021
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ বুধবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইয়াসের তাণ্ডবের আশঙ্কায় ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকে লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের কাছে প্রত্যেকের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে প্রায় ২০ হাজার বাড়িঘর ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের আরেক মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেছেন, আমি অতীতে এমন ঝড় দেখিনি। ঝড়ের তাণ্ডবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রাজ্যের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
THE VERY SEVERE CYCLONIC STORM ‘YAAS’ (PRONOUNCED AS ‘YASS’) WEAKENED INTO SEVERE CYCLONIC STORM AND LAY CENTRED AT 1230 HRS IST OF THE 26TH MAY, 2021 OVER NORTH COASTAL ODISHA NEAR LATITUDE 21.45°N AND LONGITUDE 86.8°E, ABOUT 15 KM WEST-SOUTHWEST OF BALASORE. pic.twitter.com/rDLDgu4T3p
— India Meteorological Department (@Indiametdept) May 26, 2021
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ দুপুর সোয়া ২টার দিকে এক টুইট বার্তায় বলেছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস দুর্বল হয়ে প্রবল রূপ ধারণ করেছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি ওডিশার বালাসোর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপূর্ব উপকূল থেকে উত্তরের দিকে এগিয়ে আসছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বালাশোর ও ধামারার মাঝামাঝি এলাকা হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ আছড়ে পড়তে আরও প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে। দুপুরের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওডিশার স্থলভাগে পুরোপুুরি আছড়ে পড়বে। সেই সময় ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বালেশ্বর উপকূলেও একই গতির বাতাস তাণ্ডব চালাতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ওডিশা উপকূলের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকবে। এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে, ইয়াসের প্রভাবে দুপুরের মধ্যে কলকাতায় প্রচণ্ড টর্নেডো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কারণে দুপুরের দিকে কলকাতার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, উপকূলবর্তী এলাকায় গ্রামগুলোতে পানির স্রোত ঢুকে পড়েছে। পানির তোড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। গোসাবার গ্রাম প্লাবিত এবং ২০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিঘা, শংকরপুর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নন্দীগ্রামে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে।
এসএস