ডিপসিক কী, চীনা এআই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কেন তোলপাড়?
![ডিপসিক কী, চীনা এআই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কেন তোলপাড়?](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2025January/deepseek-20250128191911.jpg)
চীনা কোম্পানি ডিপসিকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত একট চ্যাটবট যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড় তৈরি করেছে। ডিপসিকের নতুন মডেল আর-১ বাজারে আসার পর বিশ্বের অন্যতম বড় চিপ ফার্ম এনভিডিয়ার মার্কেট ভ্যালু ৬০০ বিলিয়ন কমে গেছে।
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ডিপসিকের কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাত কেঁপে উঠেছে, কারণ তারা দাবি করেছে, তাদের আর-১ মডেলটি তৈরি করতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। যেখানে অন্যান্য এআই প্রতিষ্ঠানগুলো একই জিনিস তৈরিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ডিপসিক এত কমে চ্যাটবট তৈরি করার পর এই খাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া চ্যাটবটের ওপর মার্কিন ফার্মগুলো যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের কথা বলে আসছিল, সেটিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ডিপসিক তার যাত্রা শুরু করার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এটি বিনামূল্যের সর্বোচ্চ ডাউনলোডকৃত অ্যাপে পরিণত হয়।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিপসিক নিয়ে বলেছেন, এটি তার দেশের প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য একটি সতর্কবার্তা। তবে এটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচকও বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “যদি আপনি কম দামে বানাতে পারেন। কমে পারেন এবং একই ফলাফল পান। আমি মনে করি এটি আমাদের জন্য ভালো।”
তিনি দাবি করেছেন, চীনা এই অ্যাপের সাফল্যে তিনি আতঙ্কিত ন। কারণ তার বিশ্বাস, এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রভাব থাকবে।
বিজ্ঞাপন
ডিপসিক ওপেন সোর্স ডিপসিক-ভি৩ মডেল দ্বারা চালিত। এটির গবেষকরাই জানিয়েছেন, এই মডেলটি সম্পূর্ণ করতে তাদের মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। যেখানে একই জিনিস তৈরিতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিরা খরচ করেছে বিলিয়ন ডলার। তবে অন্যান্য এআই প্রতিষ্ঠানগুলো এ দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
চীন যেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় না আগাতে পারে সেজন্য দেশটির কাছে চিপ বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন সময়ই চীনা কোম্পানির সাফল্যের বিষয়টি সামনে আসল।
বিবিসি জানিয়েছে, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র চিপ বিক্রিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে, তাই চীনা কোম্পানিগুলো এ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করেছে। তারা এ ব্যাপারে একেঅপরকে সহায়তা করেছে। এছাড়া এই প্রযুক্তিতে নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ পরীক্ষা করেছে। এসবের ফল হিসেবে এমন এআই মডেল তারা উদ্ভাবন করেছে, যেটিতে পূর্বের তুলনায় কম কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োগ হয়েছে।
এতে করে এআই চ্যাটবট তৈরির খরচ ধারণার চেয়ে অনেক কম লেগেছে। এই বিষয়টিই পুরো খাতটিকে নাড়িয়ে দিতে রেখেছে বড় ভূমিকা।
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা কে?
২০২৩ সালে চীনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় শহর হাংজুর বাসিন্দা লিয়াং ওয়েংফেং ডিপসিক প্রতিষ্ঠা করেন। ইনফরমেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৪০ বছর বয়সী এই গ্র্যাজুয়েট ‘হেজ ফান্ড’ নামের একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও তৈরি করেন। যা ডিপসিককে সহায়তা করেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও পরিচিত চ্যাটজিপিটির সর্বশেষ যে চ্যাটবটটি বাজারে ছাড়া হয়েছে, সেটির সঙ্গে ডিপসিকের তুলনা করে দেখা গেছে, এটি বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির সমান দক্ষতাই দেখিয়েছে।
ওপেনএআইয়ের প্রধান স্যাম আল্টম্যান ডিপসিকের প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে এটি কমদামে যে মানুষকে সেবা দিতে পারছে এই বিষয়টি তার পছন্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এআই সফটওয়ার কোম্পানি ডাটাব্রিকসের এআই চেয়ারম্যান ইয়ন স্টোকা বিবিসিকে বলেছেন, ডিপসিকের কমদামের সার্ভিস এই খাতকে সমৃদ্ধ করবে এবং এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে।
চীনা এই কোম্পানি দাবি করেছে, তাদের মডেলটিকে ২ মাত্র দুই হাজার বিশেষায়িত চিপের ওপর প্রশিক্ষণ দিলেই হয়। যেখানে একই ধরনের একটি চ্যাটবট তৈরিতে ১৬ হাজার চিপকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়।
সূত্র: বিবিসি
এমটিআই