১০ কোটিতে মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করেন টিউলিপের চাচী
২০১৫ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের দেশ মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকের চাচী শাহীন সিদ্দিক এবং তার চাচাত বোন বুশরা সিদ্দিক। তবে তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। শাহীন সিদ্দিকের স্বামী হলেন তারিক জামিল সিদ্দিক। যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
২০১৫ সালের আগে ২০১৩ সালে নিজের একার জন্য মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন তিনি। তবে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ থাকায় তাকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। ফাঁস হওয়া নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে বলে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
ওই সময় বিনিয়োগের মাধ্যমে মাল্টার পাসপোর্ট দেওয়ার কাজটি করত হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স।
অভিবাসন সংশ্লিষ্ট এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ওই সময় সিদ্ধান্ত নেয়— শাহীন সিদ্দিক প্রচ্ছায়া নামের একটি কোম্পানির নামে ঢাকার মূল্যবান সরকারি জমি কুক্ষিগত করেছেন। এ কারণে তাকে পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। শাহীন তার পাসপোর্টের আবেদনে প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান।
শাহীন ও তার মেয়ে বুশরা ২০১৫ সালে পাসপোর্টের জন্য যে আবেদন করেছিলেন, সেটি পেতে তাদের যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার পাউন্ড লাগত। এরসঙ্গে ফি হিসেবে আরও ৭০ হাজার পাউন্ড নিত হেনলি।
আরও পড়ুন
আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন কুয়ালামপুরের একটি ব্যাংকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার দেখিয়েছিলেন। ১১ বারে এই অর্থ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। তবে এসব অর্থের উৎস কী ছিল সেটি স্পষ্ট নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে আইন আছে তা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারবেন না।
অপরদিকে তারিক ও শাহীন সিদ্দিকের মেয়ে ওই সময় স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি তার ঠিকানা দিয়েছিলেন গ্র্যান্ড গোথিক ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট। যেটি টিউলিপের লন্ডনের কিংস ক্রস ফ্লাটের খুব কাছে অবস্থিত। এই ফ্লাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি কেন টিউলিপকে এত দামী ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন সেটি নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে।
প্রথমবার প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করায় পাসপোর্ট না দেওয়ায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের আবেদনে শাহীন সিদ্দিক দাবি করেন চট্টগ্রামের দ্য আর্ট প্রেস নামের একটি কোম্পানির পরিচালক তিনি। যেটি ১৯২৬ সালে তার বাবা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই কোম্পানি নিয়ে সন্তষ্ট না হওয়ায় তাকে ও তার মেয়েকে ওই সময় আর পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি।
বুশরা লন্ডনে পড়াশোনা শেষে জেপি মর্গান ব্যাংকে কয়েকদিন চাকরি করেন। এরপর চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে উত্তর লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরোতে পাঁচ বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। এই অর্থও তাকে তার বাবা-মা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর গত অক্টোবরে তারিক জামিল সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
টিএম