স্পেন উপকূলে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের নৌকায় শিশুর জন্ম
ইউরোপের দেশ স্পেনের উপকূলে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের নৌকায় এক শিশুর জন্ম হয়েছে। দেশটির ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার পথে অভিবাসীদের বহনকারী ডিঙ্গি নৌকায় ওই শিশু সন্তানের জন্ম হয়।
স্পেনের উদ্ধারকারী সংস্থা এ কথা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই সপ্তাহে আফ্রিকা থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণকারী অভিবাসীদের বহনকারী জনাকীর্ণ ডিঙ্গি নৌকায় এক শিশুর জন্ম হয়েছে বলে স্প্যানিশ উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছেন।
তারা ওই ছেলে শিশুটির একটি ছবিও প্রকাশ করেছে। তাকে তার মায়ের পাশাপাশি আরও অনেক অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, জনাকীর্ণ ওই নৌকাটিকে লাঞ্জারোট দ্বীপে গত ৬ জানুয়ারি প্রথম দেখা যায়। উদ্ধারকারীদের বিশ্বাস, শিশুটির জন্মের পরপরই তারা সেখানে পৌঁছায়। স্পেনে ওইদিন এপিফ্যানি ছুটি চলছিল। এপিফ্যানিতে স্থানীয় শিশুরা ঐতিহ্যগতভাবে থ্রি কিংসের কাছ থেকে উপহার পায়।
উপকূলরক্ষীদের জাহাজ এসে ওই মা ও তার শিশুকে সুস্থ অবস্থায় পায়। অভিবাসীবাহী নৌকাটিতে ১৪ জন নারী ও ৪ শিশুসহ মোট ৬০ জন আরোহী ছিলেন।
উদ্ধারকারী জাহাজের ক্যাপ্টেন বলেছেন, তারা জানতেন যে— জাহাজে একজন গর্ভবতী নারী ছিলেন, কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর “সম্পূর্ণ নগ্ন শিশুকে দেখে তারা বেশ অবাক হন যে কিনা মাত্র ১০, ১৫ বা ২০ মিনিট আগে জন্মগ্রহণ করেছিল”।
ডোমিঙ্গো ট্রুজিলো বলেন, যখন তারা সেখানে পৌঁছায় তখন মা বস্তাবন্দী ভেলার মেঝেতে শুয়ে ছিলেন এবং সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটিকে অন্য যাত্রী ধরে রেখেছিলেন। পরে ডাক্তারের পরামর্শে, শিশু ও তার মাকে হেলিকপ্টারে করে ল্যাঞ্জারোতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের অন্য কোনও জটিলতার খবর পাওয়া যায়নি।
আফ্রিকা থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে সাগর পাড়ি দেওয়ার এই রুটটি ভয়াবহ বিপজ্জনক। ২০২৪ সালে অ্যাটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছাতে গিয়ে ১০ হাজার ৪৫৭ জন অনিয়মিত অভিবাসী মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।
অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন অভিবাসী মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক হাজার ৫৩৮ জন শিশু রয়েছে। ২০২৪ সালে এই রুটে প্রাণহানি বা নিথোঁজ হওয়ার ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বলে দাবি করেছে এনজিও ক্যামিনান্দো ফ্রন্টেরাস।
আরও পড়ুন
২০২৩ সালে এই রুটে ছয় হাজার ৬১৮ জনের প্রাণহানি অথবা নিখোঁজের তথ্য দিয়েছিল এনজিওটি। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান ২০২২ সালের তুলনায় ১৭৭ শতাংশ বেশি। ২০০৭ সালের পর এটি সর্বোচ্চ বলে দাবি করেছে ক্যামিনান্দো ফ্রন্টেরাস।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) একই রুটে ২০২৪ সালে ৯৭৯ অভিবাসী মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের রুটটি ২০০৫ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে। ২০০৭ সালে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের পর রুটটিতে অভিবাসী আগমন কমেছিল। ২০১৮ সাল থেকে লিবিয়া এবং ভূমধ্যসাগরে সামরিকীকরণ করা হলে আবারও অভিবাসীরা অ্যাটলান্টিকের রুটে ফিরতে শুরু করেন।
টিএম