যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘র্যাবিট ফিভার’
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে তুলারেমিয়া নামের একটি রোগ, যেটি সাধারণভাবে পরিচিত ‘র্যাবিট ফিভার’ বা ‘খরগোশ জ্বর’ নামে। দেশটির রোগ গবেষণা ও প্রতিরাধ সংস্থা সিডিসি রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০১০ সালের তুলনায় বর্তমানে এই রোগটির সংক্রমণের হার বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।
তুলারেমিয়া রোগটি প্রথম শনাক্ত হয় ২০০০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে। ওই রাজ্যের একটি আঙুর বাগানের ১৫ জন শ্রমিক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়।
পরে সিডিসির গবেষণায় জানা যায়, ফ্র্যাঙ্কিসেল্লা তুলারেনসিস নামের এক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া এই রোগটির জন্য দায়ী। ভাইরাসটি প্রথম শিকার ছিল খরগোশ, ইঁদুর এবং ইঁদুরজাতীয় অন্যান প্রাণী। পরে তা মানুষের দেহেও সংক্রমিত হয়। সাধারণ টিক, ডিয়ার ফ্লাই প্রভৃতি পরজীবী রক্তচোষা পোকার কামড়ে এই রোগটি ছড়ায়। এছাড়া অনেক সময় পোষা খরগোশ কিংবা ইঁদুর থেকেও ছড়ায় এই রোগটি।
২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭টি অঙ্গরাজ্যে তুলারেমিয়া বা র্যাবিট ফেভারে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৬২ জন, কিন্তু গত কয়েক বছরে এই রোগটির রীতিমতো উল্লম্ফণ ঘটেছে। সিডিসির হিসেব অনুযায়ী, সম্প্রতি প্রতি বছর এই রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি ২ লাখ মানুষের মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
র্যাবিট ফিভারের উপসর্গ
এই রোগে উপসর্গগুলো হলো প্রবল জ্বর, গলাব্যাথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যাথা, ত্বক ও মুখে ঘা, চোখে চুলকানি ও ব্যাথা, কানপাকা প্রভৃতি। সিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর আশঙ্কা ২ শতাংশেরও কম, তবে অনেকক্ষেত্রেই এই র্যাবিট ফিভার রোগীকে গুরুতর অসুস্থ করে ফেলে এবং সেরে ওঠার পরও দীর্ঘদিন রোগী শারীরিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন উপসর্গে ভোগেন।
সাধারণত ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশু এবং ৬০ এবং তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিরা এই রোগে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকেন।
প্রতিরোধ
র্যাবিট ফিভারের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এই রোগটি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু প্রতিরোধ উপায় প্রস্তাব করেছে সিডিসি। এগুলো হলো—
১. বাড়ির বাইরে বেরোনোর সময় গায়ে টিক, মশা, মাছি, ছারপোকা অন্যান্য পরজীবী প্রতিরোধী লোশন মেখে নেওয়া।
২. পরজীবী পোকার কামড় থেকে বাঁচতে দীর্ঘ হাতার পোশাক ব্যবহার করা।
৩. বাসা বাড়িকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরজীবী পোকামুক্ত রাখা
৪. মাঠে খোলাধুলার সময় বা বাড়ির লনের ঘাস কাটার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।
৫. খরগোশ, ইঁদুর, গিনিপিগ , প্রেইরি ডগ প্রভৃতি স্পর্শ করার সময় হাতে গ্লাভস পরিধান করা।
৭. খোলা জলাশয়ের পানি ফুটিয়ে বা জীবাণুমুক্ত করে পান করা
৮. রান্নার সময় মাছ-মাংস, শাক-সবজি যেন সম্পূর্ণ সেদ্ধ হয়, সেদিকে খেয়ল রাখা।
সূত্র : এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড
এসএমডব্লিউ